ঢাকা, ১৪ অক্টোবর মঙ্গলবার, ২০২৫ || ২৯ আশ্বিন ১৪৩২
good-food

ফেরেশতাদের মধ্যে কি নারী-পুরুষ আছে ?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৪:০৬ ১৪ অক্টোবর ২০২৫  

ফেরেশতাদের লিঙ্গ নিয়ে মানুষ বহু শতাব্দী ধরে কৌতূহল প্রকাশ করে আসছে। কেউ বলছেন তারা নারী, কেউ পুরুষ।আবার কেউ আবার বলেন, তাদের মানবজাতির মতো লিঙ্গই নেই। ইসলামিক বিশ্বাস অনুযায়ী, ফেরেশতারা আল্লাহর অদৃশ্য সৃষ্টি—যারা শুধুমাত্র তাঁর আদেশ পালন করে। তাই তাদেরকে মানুষ হিসেবে লিঙ্গ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করা যথার্থ নয়।

 

কুরআনে সরাসরি ফেরেশতাদের লিঙ্গের উল্লেখ নেই। ইসলামের বিশিষ্ট আলিম ইবনে তাইমিয়াহ বলেছেন, “ফেরেশতারা পুরুষ বা নারী নয়; তাদের প্রকৃতি মানব বোধের বাইরে।”

 

ফেরেশতাদের বৈশিষ্ট্যও মানুষের থেকে ভিন্ন। তারা খায় না, ঘুমায় না, বিবাহ বা সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা নেই। শুধু আল্লাহর প্রশংসা ও আদেশ পালনই তাদের কাজ।বিভিন্ন শিল্পির তুলিতে জিবরাইল, মিকাইল, ইস্রাফিলের মতো ফেরেশতাদের প্রায়ই পুরুষ রূপে চিত্রিত করা হলেও, এটি শিল্পের প্রতীকী প্রকাশ; বাস্তবের লিঙ্গ নির্দেশ করে না।

 

ফেরেশতাদের লিঙ্গ নিয়ে অতিরিক্ত জিজ্ঞাসা বা বিতর্ক করা ইসলামিক বিশ্বাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

ইসলাম-পূর্ব আরবের লোকেরা বিশ্বাস করত ফেরেশতারা নারী এবং তারা আল্লাহর কন্যা।

 

আল্লাহ তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাসের নিন্দায় বলেন, “তারা দয়াময় আল্লাহর বান্দা ফেরেশতাদের নারী গণ্য করেছে। তাদের সৃষ্টি কি তারা প্রত্যক্ষ করেছিল? তাদের উক্তি অবশ্যই লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে। ” (সুরা জুখরুফ, আয়াত : ১৯)

 

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, “দেখো তারা তো মনগড়া কথা বলে যে আল্লাহ সন্তান জন্ম দিয়েছেন। তারা নিশ্চয়ই মিথ্যাবাদী।তিনি কি পুত্রসন্তানের পরিবর্তে কন্যাসন্তান পছন্দ করতেন? ” (সুরা সাফফাত, আয়াত : ১৫১-১৫৩)

 

আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) ওই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, আল্লাহ স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, মুশরিকরা আল্লাহর বান্দা ফেরেশতাদের নারী ও আল্লাহর কন্যা মনে করত এবং আল্লাহর সঙ্গে তাদের উপাসনা করা তা ছিল পুরোপুরি ভুল। (তাফসিরে কাসির : ৪/৫৭৭)

 

মোল্লা আলী কারি (রহ.) বলেন, “ফেরেশতারা আল্লাহর সম্মানিত বান্দা। আল্লাহর প্রতিটি নির্দেশ তারা মান্য করে। তারা নিষ্পাপ। তারা আল্লাহর অবাধ্য হয় না। নারী ও পুরুষের বৈশিষ্ট্য থেকে মুক্ত। “ (শরহু আল-ফিকহুল আকবার, পৃষ্ঠা ২৭)

 

ইমাম রাজি (রহ.) বলেন, তিনি আরো বলেন, ‘ফেরেশতারা পানাহার করে না, তারা বিয়ে করে না, তাদের ভেতর কোনো জৈবিক চাহিদা নেই। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তারা দিন-রাত তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, তারা শৈথিল্য করে না। ’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ২০; তাফসিরে রাজি : ১/৮৫)

 

ফলে বলা যায়, ফেরেশতারা ছেলে নাকি মেয়ে—এ প্রশ্নের কোনো নির্ভুল উত্তর নেই। বরং এটি রহস্যই রয়ে গেছে। আর মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে ফেরেশতাদের লিঙ্গ নিয়ে ভাবা যতটা কৌতূহল জাগাতে পারে, ততটাই মানব বোধের সীমাবদ্ধতা প্রতিফলিত করে।