ঢাকা, ১৩ অক্টোবর সোমবার, ২০২৫ || ২৭ আশ্বিন ১৪৩২
good-food

১০ হাজার ডলার ছাড়াবে সোনার দাম!

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:১৮ ১২ অক্টোবর ২০২৫  

ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং ডলারের দুর্বলতার সুযোগে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিবেচিত স্বর্ণের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি দশকের শেষ নাগাদ প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম পৌঁছাতে পারে ১০ হাজার ডলারে, যা বাংলাদেশি মূল্য ১২২ টাকা ধরে পড়ে ১২ লাখ ২০ হাজার টাকা। এতে করে এক ভরি স্বর্ণের দাম হবে ৫ লাখ ২ হাজার ৫৭ টাকা। আর ডলারের মূল্য বেড়ে গেলে তা আরও বৃদ্ধি পাবে।  

 

যুক্তরাষ্ট্রেভিত্তিক পত্রিকা ফরচুনে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি সপ্তাহের শুরুতে মূল্যবান এই ধাতুর দাম প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স ৪ হাজার ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। এরপর শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর ১০০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ এবং সফটওয়্যার রপ্তানি সীমিত করার ঘোষণা দিলে স্বর্ণের বাজারে নতুন করে উল্লম্ফন দেখা দেয়।

 

ট্রাম্পের এই ঘোষণার ফলে বিশ্বজুড়ে স্টক মার্কেটে বড় ধরনের দরপতন ঘটে এবং মার্কিন ডলার দুর্বল হয়ে পড়ে। বিপরীতে স্বর্ণের দাম বেড়ে যায় এক দশমিক শতাংশ, যা বিনিয়োগকারীদের কাছে এই ধাতুর আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দেয়।

 

সোমবার এক নোটে ইয়ারডেনি রিসার্চের প্রেসিডেন্ট ও বাজার বিশেষজ্ঞ এড ইয়ারডেনি স্বর্ণ নিয়ে তার আগের ইতিবাচক পূর্বাভাসের কথা তুলে ধরেন, যা প্রত্যাশার চেয়ে আগেই পূরণ হয়েছে।

 

ইয়ারডেনি যোগ করেন, “আমরা এখন ২০২৬ সালের জন্য ৫ হাজার ডলার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছি। যদি বর্তমান গতিতে চলে, চলমান দশক শেষের আগেই তা ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।”

 

২০২৩ সালের শেষভাগ থেকে স্বর্ণের মূল্য যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা বিবেচনা করলে আশা করা যায়; ২০২৮ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০২৯ সালের শুরু পর্যন্ত প্রতি আউন্সের দাম ১০ হাজার ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করতে পারে।

 

মুদ্রাস্ফীতির বিপরীতে ঝুঁকি কমানোর মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণের ঐতিহ্যগত ব্যবহার, রাশিয়ার সম্পদ জব্দ হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ডলারের বিকল্প খোঁজা, চীনের আবাসন খাতের সংকট, ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ এবং বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির প্রবণতা নেপথ্য কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। 

 

সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সুদহার কমানোর সম্ভাবনার ইঙ্গিতও স্বর্ণের দামকে সমর্থন জুগিয়েছে। নীতি নির্ধারকরা এখন শ্রম বাজারের স্থবিরতার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন এবং ট্রাম্পের শুল্কের কারণে ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার ওপরে থাকা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কিছুটা শিথিল মনোভাব দেখাচ্ছেন।

 

জিডিপি প্রবৃদ্ধির সময়েও সুদহার কমানোর সম্ভাবনা মুদ্রাস্ফীতি সংক্রান্ত উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, যা স্বর্ণের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

 

একই সময়ে, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান ঋণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বৈশ্বিক মুদ্রা ব্যবস্থা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। ফলে মূল্যবান ধাতু এবং বিটকয়েনের মতো সম্পদে বিনিয়োগ বাড়ছে। এই প্রবণতাকে ‘ডেবেসমেন্ট ট্রেড’ বলা হচ্ছে, যেখানে বিনিয়োগকারীরা ধারণা করছেন, সরকার ঋণের বোঝা কমাতে মুদ্রাস্ফীতিকে বাড়তে দেবে।

 

তবে সব বিশেষজ্ঞই এমন উল্লম্ফন নিয়ে শতভাগ আশাবাদী নন। ক্যাপিটাল ইকোনমিকস-এর জলবায়ু ও পণ্য মূল্য অর্থনীতিবিদ হামাদ হুসেন বুধবার এক নোটে বলেছেন, “ফোমো অর্থাৎ ‘পিছিয়ে পড়ার ভয়’ থেকে অনেকেই এখন স্বর্ণের বাজারে ঢুকছেন, যা এই ধাতুর বাস্তবসম্মত মূল্যায়নকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।”

 

তার মতে, ফেডের সুদহার কমানোর সম্ভাবনা, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ স্বর্ণের দাম বাড়ার পেছনে কাজ করছে। তবে মূল চালিকাশক্তিগুলো দুর্বল হওয়ায় এই বৃদ্ধি ধীরগতির হতে পারে।

 

হুসেন উল্লেখ করেন, স্বর্ণের সাম্প্রতিক উত্থান এমন এক সময়ে হয়েছে যখন ডলার স্থিতিশীল ছিল (শুক্রবার পর্যন্ত) এবং মুদ্রাস্ফীতি-সুরক্ষিত বন্ডের রিটার্নও বেশি ছিল—যা বাজারে অতিরিক্ত উৎসাহের লক্ষণ।

 

তিনি যোগ করেন, “আয়ের প্রবাহ না থাকায় স্বর্ণের প্রকৃত মূল্যায়ন করা অবাস্তবভাবে কঠিন। মোটের ওপর, আমরা মনে করি, আগামী কয়েক বছরে স্বর্ণের দাম নামমাত্র হারে ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে।”