ঢাকা, ০৯ নভেম্বর রোববার, ২০২৫ || ২৪ কার্তিক ১৪৩২
good-food
৫৯

মুহিব্বুল্লাহ পুলিশ হেফাজতে, জবানবন্দি দিতে রাজি

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৫:০৭ ২৮ অক্টোবর ২০২৫  

অপহরণের মিথ্যা অভিযোগ তুলে মামলা করার ঘটনায় ফেঁসে গেলেন গাজীপুরের টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের খতিব ৬০ বছর বয়সী মুফতি মোহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজী। তাকে হেফাজতে নিয়ে আদালতে তোলার কথা দেশকাল নিউজ ডটকমকে জানিয়েছেন গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি মো. ওয়াহিদুজ্জামান। জানিয়েছেন, মুহিব্বুল্লাহ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছেন।

 

মুহিব্বুল্লাহ যে মামলা করেছেন, সেই মামলাতেই তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে, তবে এখনও তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি বলে জানিয়েছেন ওসি। ওসি ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, “মুহিব্বুল্লাহ আমাদের কাছে সব কিছুই স্বীকার করেছেন। তিনি আদালতেও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেবেন বলে জানিয়েছেন।” মুহিব্বুল্লাহ এখন কোথায়- এই প্রশ্নে ওসি বলেন, “আছে আমাদের কাছেই। আমরা কোর্টে তুলব।”

 

তাহলে কি তাকে গ্রেপ্তার বলব?- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “না, না, গ্রেপ্তার না।” কোন মামলায় আদালতে নেবেন- তিনি যে মামলা করেছেন, সেটাতেই?- প্রশ্ন শুনে ওসি বললেন, “সেই মামলাই, সেই মামলাই।” তাহলে তো গ্রেপ্তারই- এই মন্তব্যে তিনি আবার বলেন, “না, গ্রেপ্তার না।”আজকে তুলবেন?- প্রশ্নে ওসি বলেন, “আজকে তুলব… অলরেডি তোলা হয়ে গেছে। কিন্তু গ্রেপ্তার না।”

তবে কোন আদালতে মুহিব্বুল্লাহকে নেওয়া হয়েছে, সেটি জানা গেল না ওসি ওয়াহিদুজ্জামানের কাছ থেকে।

২৩ অক্টোবর পঞ্চগড়ে শেকলে হাত পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার হয়েছেন জানিয়ে সেখানকার সংবাদকর্মীদেরকে মুহিব্বুল্লাহ বলেছিলেন, আগের দিন টঙ্গীর শিলমুন এক্সিস লিংক সিএনজি ফিলিং অ্যান্ড কনভার্সন সেন্টারের সামনে টঙ্গী টু কালীগঞ্জগামী আঞ্চলিক সড়কের ওপর একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে তুলে নেওয়া হয়। এরপর টানা একটি দিন ও রাত তাকে নির্যাতন করা হয়।

 

পঞ্চগড় থেকে টঙ্গীতে ফিরে মুসল্লিদের জমায়েতেও একই ধরনের অভিযোগ করেছিলেন এই খতিব। তার দাবি গত কয়েক মাসে তাকে বেশ কয়েকটি উড়ো চিঠি দেওয়া হয়। এসব চিঠিতে অখণ্ড ভারত ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংগঠন ইসকনের পক্ষে কথা বলতে বলা হয়। সেই সঙ্গে দেশের ধর্মভিত্তিক দলগুলো ও বিএনপি-এনসিপির বিরুদ্ধে কথা বলতে বলা হয়।

 

সর্বশেষ গত ২১ অক্টোবরের চিঠিতে কোরআন, ইসলাম, আল্লাহ শব্দ বলতে নিষেধ করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলা হয় বলে তিনি দাবি করেন। মুহিব্বুলাহ টঙ্গীতে ফিরে পূর্ব মডেল থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলাও করেন। এরপর তদন্তে নামে পুলিশ। পাওয়া যায় ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার একাধিক ফুটেজ। তার বাসের টিকিট টাকা, পথে যাত্রাবিরতি, হোটেলে খাওয়াদাওয়া, পঞ্চগড়ে বাস থেকে নামা-সব ঘটনাই সামনে আসে।

 

এরপর রবিবার মুহিব্বুল্লাহকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডি ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে, সেদিনই তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। মুহিব্বুল্লাহ পুলিশের কাছে সব কিছু স্বীকার করেছেন। তার বক্তব্যের একটি ভিডিও এরই মধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এতে তিনি বলেন, সেই ভিডিওতে দেখা যায়, মুহিব্বুল্লাহ বলছেন, “আমি হাঁটতে গেছি। পরে আমার মাথায় আসলো যে আমি চলতে থাকি। কোন দিকে যাই বলতে পারি না। পরে একটি অটোতে উঠে মীরের বাজার নামি। এরপর মনে চাইল যে আমি জয়দেবপুর যাই।

 

“সিএনজি দিয়া জয়দেবপুর গেছি। এরপরে মাথায় আসল যে আমি এখন বাসে উঠি। বাসে উঠে শ্যামলী....ওই খান থেইকা বাসে গাবতলী গেছি। ওইখান থেকে মনে চাইল যে টিকেট করি। পরে পঞ্চগড় যাই।” পঞ্চগড়ে যাওয়ার পর কী কী হয়েছে, তার বর্ণনা দিয়ে খতিব বলেন, “অনেক রাতে পঞ্চগড় নামছি। নামার পরে হাঁটতেছিলাম। কোন দিকে হাঁটতেছিলাম জানি না। আমি জানি না। এক পর্যায়ে দেখি যে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ লাইনস...এগুলা পার হয়ে যাই।”

 

শেকলে কীভাবে নিজেকে বেঁধেছেন, সেই বর্ণনাও দেন এই খতিব। তিনি বলেন, “এক পর্যায়ে আমি একটা শিকল পাইলাম। এরপর প্রসাব করতে বসলাম। জামা-পায়জামায় প্রসাব লাগায় সেগুলা খুইলা ফেলি। কিন্তু পরে যে এগুলা পরতে হবে সেটা মাথায় নাই। ঠান্ডায় ওইখানে শুয়া পড়লাম। পায়ে শিকল দিলাম।” এসব কোন উদ্দেশ্যে করেছেন, সেটি অবশ্য বলেননি মুহিব্বুল্লাহ। ভিডিওতে তিনি বলেন, “এইসব যে কেন করতেছি তার কোনো চিন্তাভাবনা আমার নাই। যা মাথায় আসেতেছে তাই করতেছি...।”