ঢাকা, ২৭ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১৪৮০

আল আকসা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:৪৬ ১৭ মে ২০২১  

ফিলিস্তিনের আল আকসাকে সম্প্রতি মুসলমানদের পবিত্র স্থান বলে ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো। গত  ১৩ অক্টোবর পাস হওয়া এক প্রস্তাবনায় বলা হয়, জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদের ওপর ইসরাইলের কোনো অধিকার নেই, সেটি মুসলমানদের পবিত্র স্থান।


এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য এবং বিশ্বসমাজে সর্বজনবিদিত বিষয়। তবে একে সিনাগগ বা ইহুদি মন্দির দাবি করে ইসরাইল অন্যায় আগ্রাসন ও মানবতাবিরোধী আচরণ করছে।


মুসলিমদের কাছে আল আকসা নামে পরিচিত স্থাপনাটি ইহুদিদের কাছে ‘টেম্পল মাউন্ট’ বলে খ্যাত। আল আকসা বা বায়তুল মোকাদ্দাস হচ্ছে ইসলামের প্রথম কেবলা এবং মক্কা ও মদিনার পর তৃতীয় পবিত্র স্থান। রাসূলে করিম (সা.) মক্কার মসজিদুল হারাম, মদিনার মসজিদুন্নবী ও বায়তুল মোকাদ্দাস সফরকে সওয়াব হিসেবে উল্লেখ করেছেন। 


বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদ এবং এর আশপাশের এলাকা বহু নবীর স্মৃতিবিজড়িত। এ পবিত্র নাম শুধু স্থানের সঙ্গে জড়িত নয়। বরং সব মুসলমানের ঈমান ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এখানে রয়েছে অসংখ্য নবী-রাসূলের মাজার।


আল আকসা মসজিদের গুরুত্বের আরেকটি কারণ প্রথম থেকে হিজরত পরবর্তী ১৭ মাস মুসলমানরা সেদিকে মুখ করে নামাজ আদায় করতেন। পরবর্তীতে মহান আল্লাহর নির্দেশে মুসলমানদের কেবলা মক্কার দিকে পরিবর্তিত হয়।


মুসলমানদের প্রথম কেবলা হিসেবে পরিচিত এ মসজিদ পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত। আল আকসা মসজিদের অর্থ দূরবর্তী মসজিদ।েএর অপর নাম ‘বায়তুল মুকাদ্দাস।  


এ পবিত্র মসজিদ থেকে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ঊর্ধাকাশে গমন তথা মিরাজ করেছিলেন। তিনি এসময় আল আকসায় অতীতের সব নবী-রাসূলের জামাতে ইমাম হয়ে দু’রাকাত নামাজ আদায় করেন। মহান আল্লাহ এ সম্পর্কে বলেন, ‘সব মহীমা তার- যিনি বান্দাকে একরাতে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছিলেন, যার চতুর্পাশকে আমি বরকতময় করেছি। (আর এই ভ্রমণ করানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে) যাতে আমি আমার নিদর্শন তাকে প্রদর্শন করি। ’ -সূরা বনী ইসরাইল: ১


এ মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। একদল ইতিহাসবিদ মনে করেন, আল আকসা মূলত হজরত আদম (আ.)-এর মাধ্যমে তৈরি হয়, যা পরবর্তী নবীরা পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করেন।


হজরত ইবরাহিম (আ.) কাবাগৃহ নির্মাণের ৪০ বছর পর হজরত ইয়াকুব (আ.) আল আকসা তৈরি করেন। এরপর খ্রিস্টপূর্ব ১০০৪ সালে হজরত সোলায়মান (আ.) এই মসজিদটির পূণর্নির্মাণ করেন। বিভিন্ন শাসকের সময় এতে অতিরিক্ত অংশ যোগ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে গম্বুজ, আঙ্গিনা, মিম্বর, মেহরাব ও অভ্যন্তরীণ কাঠামো।


৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে সমগ্র বায়তুল মোকাদ্দাস এলাকা মুসলমানদের দখলে আসে। এরপর মুসলমান শাসকরা কয়েকবার এ মসজিদের সংস্কার করেন। কিন্তু ১০৯৬ সালে খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা ফিলিস্তিন দখল করে নেয়।  


পরে আল আকসার ব্যাপক পরিবর্তন করে একে গীর্জায় পরিণত করে। তারা মসজিদের গম্বুজের উপরে ক্রুশ স্থাপন করে এর নাম রাখে- ‘সুলাইমানি উপাসনালয়।


১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম সেনাপতি গাজী সালাহউদ্দিন আইয়ুবী জেরুজালেম অধিকার করেন। পরে আগের নকশা অনুযায়ী আল আকসা মসজিদের পুণর্নির্মাণ করেন।  


মসজিদটিতে ২টি বড় এবং ১০টি ছোট গম্বুজ রয়েছে। এটি নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ে স্বর্ণ, সিসা বা লিড এবং মার্বেলসহ বিভিন্ন পাথর ব্যবহৃত হয়। এর আয়তন সাড়ে তিন হাজার বর্গমিটার। পাঁচ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন।


বর্তমানে ইহুদিবাদী ইসরাইল আল আকসা দখল করে রেখেছে। ১৯৪৮ সালের ১৫ মে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর বায়তুল মোকাদ্দাস মুসলমানদের হস্তচ্যুত হয়। সেই থেকে তাদের দখলে রয়েছে। 


১৯৬৯ সালে তারা আল আকসায় অগ্নিসংযোগও করে। বর্তমানে এ মসজিদে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। ইসরাইলের মুসলিম বাসিন্দা এবং পূর্ব জেরুজালেমে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা সেখানে প্রবেশ ও নামাজ আদায় করতে পারে । আবার অনেক সময় বাধাও দেওয়া হয়। 


এই বিধিনিষেধের মাত্রা সময়ে সময়ে পরিবর্তন হয়। কখনও শুধু জুমার নামাজের সময় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। গাজার অধিবাসীদের জন্য বিধিনিষেধ অনেক বেশি কঠোর। ইসরাইল সরকারের দাবি, নিরাপত্তার কারণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।  


ঐতিহাসিকভাবে এটি মুসলমানদের পবিত্র স্থান। মুসলমানরা তাদের পবিত্র ভূমি, প্রথম কিবলা ও তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ দ্রুত ফিরে পাক- শান্তিপ্রিয় বিশ্বমানবতার এটা একান্ত প্রত্যাশা।