ঢাকা, ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১০ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৭৫৯

নতুন সংকটে বিশ্ব

যুদ্ধের দামামা মধ্যপ্রাচ্যে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১২:১৬ ৪ জানুয়ারি ২০২০  

ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ডের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে নতুন করে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে এখন বাজছে যুদ্ধের দামামা। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শংকা করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। ব্যাপক রক্তপাতের আশংকা জানিয়েছেন তারা। 

 

ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রামাজান শরিফ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ক্ষণিকের এই আনন্দ-উল্লাস শোকে পরিণত হবে। 
শুক্রবার মার্কিন হামলায় অভিজাত এই বাহিনীর কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল সোলাইমানি নিহত হন।

 

এদিকে, দু'দেশের মধ্যকার উত্তেজনার মধ্যেই নিজেদের যুদ্ধবিমানের মহড়া শুরু করে দিয়েছে ইরান। দেশটির পশ্চিম আকাশে যুদ্ধবিমান উড়তে দেখা গেছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে যুদ্ধবিমান ওড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

 

ইরান যেভাবে যুদ্ধবিমান উড়াতে শুরু করেছে তাতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে শুক্রবার ড্রোন হামলা চালিয়ে সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পেন্টাগন।

 

পেন্টাগন জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশেই ওই হামলা চালানো হয়েছে। ইরানের ভবিষ্যৎ হামলা প্রতিহত করতেই এই অভিযান চালানো হয়। 
পেন্টাগন বলছে, জেনারেল সোলেইমানি ইরাকে মার্কিন কূটনীতিক এবং কর্মকর্তাদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। জেনারেল সোলেইমানি এবং তার কুর্দস বাহিনী শত শত মার্কিনি এবং জোটের সদস্যের হতাহতের পেছনে দায়ী বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, ইরানের পশ্চিম আকাশে যুদ্ধবিমানের মহড়া চলছে। যুদ্ধবিমান সতর্ক অবস্থানে থেকে পাহারা দিচ্ছে। 


ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ এক টুইট বার্তায় বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের হঠকারিতার পরিণতি ভোগ করতে হবে। 
বিবৃতিতে জেনারেল সোলাইমানির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ওয়াশিংটন।  
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, চলতি সপ্তাহে বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে হামলার অনুমোদন দিয়েছিলেন জেনারেল সোলাইমানি।

 

এদিকে, আইআরজিসির মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রমজান শরিফ বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র তোমরা কড়া জবাবের জন্য অপেক্ষা করো।’ সোলেইমানির রক্তের বদলা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। 
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ।


ইরানের এই শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যা ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রাচ্যে এর মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে নতুন করে ইরানের উত্তেজনা ওই অঞ্চলে ব্যাপক সংঘাত ও রক্তপাতের সূচনা করতে পারে। জেনারেল সোলাইমানির মৃত্যুর জবাব নিতে কঠোর অবস্থান নেবে ইরান। ফলে ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।



আশঙ্কা জানিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার মাধ্যমে যুদ্ধের হুমকির মুখে পড়লো মধ্যপ্রাচ্য। ভবিষ্যৎ পরিণতির কথা না ভেবেই সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানি সমরবিদ সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর সৃষ্ট উত্তেজনার পারদ, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র এমনকি মধ্যপ্রাচ্য ছাড়িয়ে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে বলেও মনে করছেন অনেকে।

 

জেনারেল কাসেম সোলাইমানি মার্কিন হামলায় নিহত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ যখন তরতর করে ওপরে উঠছে, তখন বিশ্লেষকরা ব্যস্ত বিশ্ব রাজনীতির সমীকরণ মেলাতে।

 

পর্যবেক্ষকদের মতে, জেনারেল কাসেমিকে হত্যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের মতে, এ পদক্ষেপের কারণে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনার ক্ষীণ সম্ভাবনাও দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে গেল।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর মোহাম্মদ মারান্ডি বলেন, ইরান এবং ইরাক দুটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। জেনারেল কাসেমিকে ইরানিরা বীর হিসেবে মান্য করে। তাই ইরাকের অভ্যন্তরে ইরানি জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা, তেহরানের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণার থেকেও বড় কিছু। আমার মনে হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিষদ বিবেচনা না করে, তড়িঘড়ি  এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।


মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক প্রফেসর উজি রাবি বলেন, এটাকে খুব নাটকীয় একটা ঘটনা বলা চলে। মধ্যপ্রাচ্য বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়লো।


অনেক বিশ্লেষকের আশঙ্কা, কাসেমি হত্যাকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বিশ্বব্যাপী। বিশেষ করে, এ ঘটনার পর বৈশ্বিক অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খাবে।

 

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ পল পং বলেন, ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের সাধারণ মানুষই নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। হয়তো এটা বিশ্বযুদ্ধে রূপ না নিয়ে সর্বোচ্চ আঞ্চলিক যুদ্ধেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কিন্তু এর প্রভাব পড়বে বিশ্বব্যাপী। তেলের দাম বাড়ার সাথে সাথে এরই মধ্যে বেশ কিছু দেশের শেয়ার বাজারে ধস নামতে শুরু করেছে।

 

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, কাসেমির অনুপস্থিতির সবচেয়ে বড় সুযোগ নেবে প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়া আইএস জঙ্গিরা। আর সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়বে লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ফিলিস্তিনের হামাস। 
 

বিশ্ব বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর