ঢাকা, ২৪ এপ্রিল বুধবার, ২০২৪ || ১১ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৪৯০

পবিত্র হজ পালনের ৬ দিন

হজযাত্রীদের করণীয় কী কী

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৩:৪৭ ৭ জুলাই ২০২২  

মুসলমানদের জন্য একটি আবশ্যকীয় ইবাদত বা ধর্মীয় উপাসনা পবিত্র হজ। এটি ইসলাম ধর্মের পঞ্চম স্তম্ভ। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জীবনে একবার হজ করা ফরজ। 

 

পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। আরবি জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ হজের জন্য নির্ধারিত সময়।

 

পবিত্র হজ পালনের সময় হজযাত্রীরা কী কী করবেন? বিস্তারিত জানাতে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আরব নিউজ।

 

প্রায় ১৪০০ বছর ধরে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে অনুসরণ করে হজযাত্রীরা মহান আল্লাহর প্রতি অনুগত ও বিশুদ্ধ আধ্যাত্মিক অবস্থায় তাদের যাত্রা শুরু করেন, যা ইহরাম নামেও পরিচিত।


 
হজকালীন সার্বিক অবস্থাকে বলা হয় ইহরাম, যার প্রধান চিহ্ন হলো দুই খণ্ড সেলাইবিহীন সাদা কাপড় পরিধান করা। এটি পুরুষদের জন্য দুটি সাদা সেলাইবিহীন কাপড়, যার একটি কোমরের চারপাশে জড়িয়ে হাঁটুর নিচে পৌঁছে, অন্যটি বাঁ-কাঁধের ওপর দিয়ে টানা হয় এবং ডানদিকে বাঁধা থাকে। তবে, নারীদের জন্য সাধারণ পোশাক পরাই বিধান। ইহরামের নির্দিষ্ট স্থানকে বলা হয় মিকাত। হজের সময় তালবিয়াহ নামক দোয়া পাঠ করা হয়।

 

তালবিয়াহ হলো - ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা, লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইকা। ইন্নাল হামদা ওয়ান নেয়ামাতা লাকা ওয়াল মুলকা লা-শারীকা লাকা।’ এর অর্থ হলো, হে আল্লাহ, আমি হাজির আছি, আমি হাজির আছি। আপনার কোনো শরীক নেই, আমি হাজির আছি। নিশ্চয় সকল প্রশংসা ও নেয়ামত আপনারই এবং সমগ্র বিশ্বজাহান আপনার। আপনার কোনো শরীক নেই।

 

৭ জিলহজ
জিলহজের ৭ তারিখ পবিত্র মক্কায় প্রবেশ করে প্রথমে হজযাত্রীরা হাজারে আসওয়াদ (কালো পাথর) থেকে শুরু করে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে সাত বার কাবাকে প্রদক্ষিণ করেন। এটি হজের স্বাগত তাওয়াফ হিসেবে পরিচিত। মুসলমানদের জন্য এটি হজের একটি অপরিহার্য অঙ্গ।

 

তারপর হজযাত্রীরা সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের দিকে রওনা হন। যেখানে তারা সায়ী করেন। এটি হলো - দুই পাহাড়ের মধ্যে সাত বার দৌড়ে প্রদক্ষিণ করা।

 

৮ জিলহজ
এদিন হজযাত্রীরা মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদ (মসজিদুল হারাম) থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকা মিনায় ভ্রমণ করেন। দিনটি  ‘ইয়াম আল-তারউইয়া’ নামেও পরিচিত,  যেখানে তাঁরা তাঁদের দিন ও সন্ধ্যা পূর্ণ করেন। এটি হজের প্রথম দিন।

 

৯ জিলহজ
হজের দ্বিতীয় দিনে তীর্থযাত্রীরা ২০ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দানে যাত্রা করবেন। বিশেষ এ দিনটি প্রার্থনার জন্য উৎসর্গীকৃত। আরাফাতের ময়দানে তাঁরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করবেন এবং দুপুরে জোহর ও আসরের নামাজ একসঙ্গে আদায় করবেন।

 

আরাফাতের দিনটি হজযাত্রী এবং সব মুসলিমের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি সেই দিন যেটি ‘পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী বছরের সব পাপের ক্ষমা’ পাওয়া যায় এবং সারা বছরের মধ্যে ইবাদত ও প্রার্থনার জন্য সর্বোত্তম দিন।

 

৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে পালন করা হবে পবিত্র হজ। এদিন ফজরের পর সম্ভব হলে মিনায় গোসল করে নেওয়া অথবা অজু করে সকাল সকাল আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন হজযাত্রীরা।

 

৯ জিলহজ জোহরের আগেই আরাফাতের ময়দানে গিয়ে উপস্থিত হতে হন এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করতে হয়। আর এটাই হলো হজের অন্যতম রোকন। 

 

আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে হজের খুতবা শুনে নিজ নিজ তাবুতে জোহর ও আসরের নামাজ নির্দিষ্ট সময়ে আলাদাভাবে আদায় করবেন হাজিরা। সেখানে তওবা-ইসতেগফার, তাকবির, তাসবিহ-তাহলিল ও মোনাজাতে কান্নাকাটিতে আত্মনিয়োগ করবেন তাঁরা।

 

বিশেষ করে হজের খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং তা বুঝে নিয়ে জীবনের বাকি সময় এ নসিহতের আলোকে জীবন গড়ার দীপ্ত শপথ নেওয়া এর মূল উদ্দেশ্য।

 

সন্ধ্যায় মাগরিব না পড়ে মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা দেবেন হাজিরা। মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও ইশার নামাজ এক আজানে আলাদা আলাদা ইকামতে একসঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আদায় করবেন।

 

১০ জিলহজ
মুজদালিফায় সারা রাত খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করার পর সুবহে সাদিক পর্যন্ত থাকা সুন্নত। সুবহে সাদিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত যেকোনো এক মুহূর্ত মুজদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্য উঠার কিছু আগে মিনার উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন তাঁরা।

 

পাথর সংগ্রহ 
মিনায় জামরাতে (শয়তানকে মারার জন্য) মুজদালিফায় অবস্থানের সময় রাতে কিংবা সকালে কঙ্কর সংগ্রহ করবেন হাজিরা।

 

কংকর নিক্ষেপ 


১০ জিলহজ সকালে মুজদালিফা থেকে মিনায় এসে বড় জামরাতে সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন হাজিরা। আর তা জোহরের আগেই সম্পন্ন করতে হবে।

 

কুরবানি করা
বড় জামরাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করে মিনায় কোরবানির পশু জবাই করতে হয়। এ ক্ষেত্রে যারা ব্যাংকের মাধ্যমে কুরবানি সম্পন্ন করবেন, তারা ব্যাংকের লোকদের কাছ থেকে মাথা মুণ্ডনের নির্দিষ্ট সময় জেনে নেন।

 

মাথা মুণ্ডন করা
কোরবানির পর পরই মাথা মুণ্ডনের মাধ্যমে হজের ইহরাম থেকে হালাল হবেন হাজিরা। মাথা মুণ্ডনের মাধ্যমে হাজিরা ইহরামের কাপড় পরিবর্তন করাসহ সব সাধারণ কাজ করতে পারলেও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে।

 

১১ ও ১২ জিলহজ
তাওয়াফে জিয়ারত : হজের সর্বশেষ রোকন হলো তাওয়াফে জিয়ারত, যা ১১ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগে তাওয়াফে জিয়ারত না করতে পারলে দম বা কোরবানি কাফফারা আদায় করতে হবে।

 

কংকর নিক্ষেপ : ১১ ও ১২ জিলহজ প্রতিদিন মিনায় অবস্থান করবে এবং ধারাবাহিকভাবে ছোট, মধ্যম ও বড় জামরাতে সাতটি করে ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন হাজিরা। তবে, যদি কেউ কঙ্কর নিক্ষেপের আগে কিংবা পরে কাবা শরিফ গিয়ে তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করেন, তাহলে তাঁকে তাওয়াফের পর আবার মদিনায় চলে আসতে হবে এবং মিনায় অবস্থান করতে হবে।

 

বিদায়ী তাওয়াফ
সারা বিশ্ব থেকে আগত সব হজপালনকারীর জন্য দেশে রওয়ানা হওয়ার আগে তাওয়াফ করা আবশ্যক। এ তাওয়াফকে বিদায়ী তাওয়াফ বলে। তবে জিলহজ মাসের ১২ তারিখের পর যেকোনো নফল তাওয়াফই বিদায়ী তাওয়াফ হিসেবে আদায় হয়ে যায়।

 

মহামারীর বিধিনিষেধের মধ্যে গত দুই বচর হজ হয়েছে সীমিত পরিসরে। ২০২০ সালে কেবল সৌদি আরবে অবস্থানরত ১০ হাজার বিদেশিকে হজের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ২০২১ সালে তা বেড়ে হয় ৬০ হাজার।

 


সেই ভীতিকর পরিস্থিতি কেটে যাওয়ার পর কিছুটা বড় পরিসরে এ বছর বিশ্বের ১০ লাখ মুসলমানকে হজে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে সৌদি আরব। তাদের মধ্যে সাড়ে ৮ লাখ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন। বাকিরা সৌদি আরবের নাগরিক।

 

বাংলাদেশের মানুষও হজ করার সুযোগ পাচ্ছে দুই বছর পর। কোভিডের আগের বছরগুলোতে বাংলাদেশ থেকে যেখানে সোয়া এক লাখের বেশি মানুষ হজে যাওয়ার সুযোগ পেতেন, এবার সে সুযোগ পেয়েছেন তার অর্ধেক। 

 

করোনাভাইরাসের অন্তত দুই ডোজ টিকা নেওয়া থাকলে তবেই এবার হজে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে ঝুঁকি বিবেচনায় ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের সে সুযোগ হয়নি।

 

বিধিনিষেধের কড়াকড়ি কমে আসায় হাজযাত্রীদের অনেকেই মাস্ক ছাড়া হজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানিকতায় যোগ দিচ্ছেন। তবে নিরাপত্তাসহ সার্বিক কার্যক্রমে নিয়োজিত সৌদি কর্মীদের মুখে মাস্ক দেখা গেছে।