ঢাকা, ১১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৫ || ২৬ ভাদ্র ১৪৩২
good-food
৪৪৪

লিঁওকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে বায়ার্ন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৬:৪০ ২০ আগস্ট ২০২০  

লিঁওকে কঠিন শিক্ষা দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বায়ার্ন মিউনিখ। বুধবার লিসবনে সেমিফাইনালে ফরাসি ক্লাবটিকে ৩-০ গেলে হারিয়েছে তারা। আগামী রোববার ফাইনালে জার্মান ক্লাবটির প্রতিপক্ষ আরেক ফরাসি দল পিএসজি। ম্যাচের প্রথমার্ধে দুই গোল করেন সার্জি গ্যানাব্রি। আর শেষ প্রান্তে তৃতীয় গোলটি করেন রবার্ট লিওয়ানদোস্কি।

এস্তাদিও হোসে আলভালদেতে খেলার শুরুতেই এগিয়ে যাওয়ার দুটি দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করার খেসারত দিতে হয়েছে লিঁওকে। মেমফিস ডিপে ও কার্ল টোকো-একাম্বির হাত ধরে সূচনাতেই এগিয়ে যেতে পারত তারা। কিন্তু এ সুযোগ নষ্ট করার মিনিট খানেকের মধ্যে গ্যানাব্রি অসাধারণ এক শিক্ষা দিয়ে দিয়েছে ক্লাবটিকে। ১৮ মিনিটে একক দক্ষতায় চারজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বায়ার্নকে এগিয়ে দেন তিনি।

৩৩ মিনিটে এ জার্মান উইঙ্গার ব্যবধান দ্বিগুন করেন। গ্রুপ পর্বে টটেনহ্যাম হটস্পারের বিপক্ষে ৭-২ গোলের জয়ের ম্যাচে চার গোল করেছিলেন গ্যানাব্রি। এবারের আসরে এ নিয়ে নয় ম্যাচে ৯টি গোল করলেন তিনি।
ম্যাচ শেষের দুই মিনিট আগে মৌসুমের ৫৫তম গোলটি করেন পোলিশ ফরোয়ার্ড লিওয়ানদোস্কি।

এ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চলতি আসরে ১০ ম্যাচে সর্বমোট ৪২ গোল করলেন বেভারিয়ানরা। এর মধ্যে বার্সেলোনার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ৮-২ গোলের উড়ন্ত জয় দীর্ঘদিন সমর্থকদের মনে গেঁথে থাকবে। খেলা শেষে বায়ার্ন কোচ হান্সি ফ্লিক বলেন, আমরা জানতাম এ ম্যাচ বেশ কঠিন হবে। প্রথমে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কিছুটা হলেও ভাগ্যের প্রয়োজন ছিল। মূলত সার্জিই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে।

এবারের মৌসুমে বায়ার্ন নিজেদের সব ইউরোপীয়ান ম্যাচে জয়ী হয়েছে। কিন্তু এ পরিসংখ্যান হাই ভোল্টেজ ফাইনালে পিএসজির বিপক্ষে যে খুব একটা কাজে আসবে না তা সহজেই অনুমেয়। দুর্দান্ত এক ফাইনালের অপেক্ষা করতেই পারেন পুরো বিশ্বের ফুটবল সমর্থকরা। যদিও লিসবনে দর্শকশুন্য স্টেডিয়ামে ফাইনালটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যে কারণে সমর্থকদের অনুপস্থিতি অবশ্যই দুই শিবিরেই অনুভূত হবে।

ফরাসি মৌসুমে সপ্তম স্থানে থেকে লিগ শেষ করেছে লিঁও। করোনাভাইরাসের কারণে একটু আগেভাগেই লিগ ওয়ান মৌসুম শেষের ঘোষণা দেয়া হয়। ফ্রেঞ্চ চ্যাম্পিয়ন পিএসজি অপর সেমিফাইনালে আরেক জার্মান ক্লাব আর বি লিপজিগকে ৩-০ গোলে পরাজিত করে ফাইনালে উঠেছে।

বায়ার্নের কানাডিয়ান মিডফিল্ডার আলফোনসো ডেভিস বলেছেন, এটা আমার কাছে স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতোই ঘটনা। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলা এবং পরবর্তীতে ফাইনালে উন্নীত হওয়া, এর থেকে একটি খেলোয়াড়ের বড় প্রাপ্তি আর কিছুই হতে পারে না। এটাই আমার কাছে সবকিছু।

ষষ্ঠ ইউরোপীয়ান কাপ জয়ের লক্ষ্যে জার্মান চ্যাম্পিয়নরা মাঠে নামবে। সর্বশেষ সাত বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা ঘরে তুলেছিল বায়ার্ন। এ নিয়ে ১১তম ফাইনালে উঠলেও প্রথমবার পিএসজির মোকাবেলা করতে হচ্ছে তাদের।

এদিকে দ্বিতীয়বারের মতো সেমিফাইনালে খেলা লিঁওর জন্য পরাজয়টা ছিল দারুণ হতাশার। ২০১০ সালে প্রথমবার সেমিফাইনালেও বায়ার্নের কাছে পরাজিত হয়েই বিদায় নিতে হয়েছিল তাদের। অথচ রুডি গার্সিয়ার দল নকআউট পর্বে জুভেন্টাস ও ম্যানচেস্টার সিটির মতো জায়ান্টদের বিদায় করে দিয়েই শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছিল। 

এখন নতুন লিগ ওয়ান মৌসুমে এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখাই হবে লিঁওর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে একটি বিষয় তাদের জন্য হতাশার। ২৪ বছর পর প্রথমবারের মতো ২০২০/২১ মৌসুমে ইউরোপীয়ান ফুটবলে খেলতে পারবে না লিঁও। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জয়ী হতে পারলেই কেবল তাদের সামনে সুযোগ ছিল পুনরায় এ আসরে ফিরে আসার। সেমিফাইনালে দুটি সুযোগের অন্তত একটিও যদি শুরুতেই কাজে লাগাতে পারতো ম্যাচের ভাগ্য হয়ত পরিবর্তিত হতেও পারতো।

ক্যামেরুনের ইনফর্ম ফরোয়ার্ড টোকো একাম্বি বলেছেন, বায়ার্নকে অভিনন্দন। আমি তাদেরকে অপরাজেয় মনে করি না। আমাদেরও গোলের ভালো সুযোগ এসেছিল। সব মিলিয়ে আমরা ভালোই খেলেছি।

ম্যাচের শুরুতে বায়ার্ন বেশ ঝুঁকি নিয়ে খেলা শুরু করেছিল। প্রতিপক্ষকে সামনে রেখে তারা কিছুটা পিছনে নেমে রক্ষনাত্মক কৌশল অবলম্বন করেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় চার মিনিটে প্রথম সুযোগটি পায় লিঁও। থিয়াগো আলচানতারার পাস কেড়ে নিয়ে ম্যাকেন্সে ক্যাকুরেট ডিপের দিকে বল বাড়িয়ে দেন। ম্যানুয়েল নয়্যারকে পাশ কাটিয়ে তার কার্লিং শট জালের ঠিকানা খুঁজে পায়নি। 

১৩ মিনিট পরেই ডুবোয়িসের পাস থেকে টোকো-একাম্বি দুইবারের প্রচেষ্টার গোল করতে ব্যর্থ হন। এর ৪৯ সেকেন্ডের মধ্যেই লিঁও পিছিয়ে পড়ে। মধ্যমাঠ থেকে জসুয়া কিমিচের বাড়নো পাসে ডানদিক থেকে গ্যানাব্রি একাই বল নিয়ে চারজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন। সেখান থেকে তার বা পায়ের জোড়ালা শটটি আটকাতে পারেননি এ্যান্থনি লোপেজ। 

এরপরই ম্যাচের চেহারা পাল্টে যায়। ৩৩ মিনিটে ইভান পেরিসিচের লো ক্রসে লিওয়ানদোস্কির শট লোপেজ আটকে দিলেও ফিরতি বলে গ্যানাব্রি ব্যবধান দ্বিগুন করেন। বদলী খেলোয়াড় ফিলিপ কুটিনহোর একটি গোল অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায়। ৮৮ মিনিটে কিমিচের ফ্রি-কিক থেকে হেডের সাহায্যে দলের হয়ে তৃতীয় গোলটি করেন লিওয়ানদোস্কি।

এ নিয়ে টানা ২০ ম্যাচে জয় তুলে নেয়ার পাশাপাশি টানা ২৯টি ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে বায়ার্ন। ডিসেম্বর থেকে দলটির এ যাত্রা শুরু হয়েছে। এর কয়েক সপ্তাহ আগে ফর্মহীনতার কারণে তারা কোচ নিকো কোভাচকে বরখাস্ত করেছিল। ফ্লিকের অধীনে বদলে যাওয়া বায়ার্ন এখন মৌসুমের সবচেয়ে বড় শিরোপাটি থেকে আর মাত্র এক ম্যাচ দূরে অবস্থান করছে।

খেলাধুলা বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর