ঢাকা, ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১০ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৫৫৭

করোনা যুদ্ধে শহীদ জননীর সন্তানের গীতিকা

মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:৫১ ৪ জুলাই ২০২০  

১.  সন্মিলিত সামরিক হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা যেদিন মায়ের সম্ভাব্য পরিণতির কথা জানিয়ে দিলেন, সেদিন আমার যুদ্ধ নতুন করে শুরু হল। যে করেই হোক মাকে বাঁচাতে হবে। আমি মায়ের পাশে দাঁড়াই। টুকটাক কথা বলি। নিয়মিত ওষুধ -পথ্য খাচ্ছেন কি না জিজ্ঞেস করি।

মা আমাকে মনে করিয়ে দেন, আমি সুপার ম্যান নই। এই ছোঁয়াচে ভয়াল ব্যাধি আমারও হতে পারে। আমি কি করে চলে যাই? মা, আমি যে তোমারই স্তন্যপান করা অর্বাচীন এক সন্তান!

 

২. 'আজ কেমন আছো, মা? '

প্রশ্নের উত্তর কৌশলে এড়িয়ে করোনা আক্রান্ত আমার বাবা আর বোনের আরোগ্য সম্ভাবনার কথা তিনি উৎকন্ঠার সাথে জানতে চান । মায়ের রোগাক্লান্ত মুখচ্ছবিতে করোনা বিদ্ধস্ত এক পরিবারের দুমড়ে মুচড়ে ফেলা মানচিত্র দেখতে পাই।

 

৩. বিরলপ্রজ ওষুধ দরকার। আমি উন্মত্তের মত মধ্যরাতে সারা ঢাকা চষে ফিরি। প্লাজমা দরকার, আমি উন্মাদ হয়ে যাই। যে করেই হোক প্লাজমা যোগাড় করতেই হবে। নিজে চিকিৎসক হিসেবে সবকিছু বুঝলেও মায়ের চিকিৎসকদেরকে রাতবিরেতে বারবার অধীর হয়ে ফোন করি।

 

৪. যখন মায়ের লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলা হল তখন আমি মায়ের পাশে। গ্রাফগুলি আর উঠছে না, নামছে না। ফ্ল্যাট -----------------।Our sweetest songs are those that tell of saddest thaught। আমি গ্রাফে মধুরতম সংগীতের স্বরলিপির আঁকিবুঁকি দেখতে পাই।

 

৫. মাকে মরচুয়ারিতে রাখা হল। মা তো কখনও একা ঘরে থাকেন নি। উনি তো ভয় পাবেন। আচ্ছা ওরা কি মায়ের সাথে আমাকে থাকতে দিবে?

 

৬. মা কে সি এম এইচ মসজিদে জানাজা পরানো হল। এই তো অল্প কদিন আগেই মায়ের সাথে সারাদিন কাটালাম। এক বিছানায় ঘুমালাম। তাঁর শরীরে কেমন মা মা গন্ধ। তিনি খাটিয়াতে শুয়ে আছেন। আমি দূর থেকেও সেই মা মা সুবাসিত গন্ধ আবার পেলাম।

 

৭. মাকে বনানীতে সামরিক কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হল। আমার শরীরে তখন হাজার হাতির শক্তি। মাটির জমিনে মা কে নিজহাতে শুইয়ে দিলাম। কবর মাটি দিয়ে ঢেকে দিচ্ছি। কে বলেছে এটা কবর? এখানে মা ঘুমাবেন।ওরা কারা? যারা মায়ের লাশ রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায়?

 

৮. শিশুকালে মা গল্প বলে আমায় ঘুম পাড়াতেন।আজ আমি মাকে যুদ্ধজয়ের গল্প বলবো। মা তুমি জীবনের অনেক সময়ই জায়নামাজে কাটিয়েছো। জানো মা, মহামারীর মৃত্যু সেতো শহীদের মৃত্যু। আমি সেই শহীদ জননীর নাড়ি ছেঁড়া ধন। আমার কিসের ভয়?