ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
২৫৩

দেশের ভাবমূর্তি কেউ নষ্ট করবে তা মেনে নেবেন না বঙ্গবন্ধুকন্যা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৪:১৩ ২৪ ডিসেম্বর ২০২২  

বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কেউ নষ্ট করবে, সেটা বঙ্গবন্ধুকন্যা হিসেবে মেনে নেয়া হবে না। ষ্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

২৪ ডিসেম্বর শনিবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে বক্তব্যে এ কথা বললেন তিনি। 

নিজের জীবন থাকতে দেশের স্বার্থ কারও কাছে বিলিয়ে দেবেন না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারের ধারাবাহিকতার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে। দেশের স্বার্থ কারও কাছে বিলিয়ে দেয়া হবে না।’

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু… আমাদের ওপর দুর্নীতির অভিযোগ এসেছিল। দুর্নীতি করে টাকা বানাতে আসিনি। আমার বাবা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, আর আমি চার চারবার প্রধানমন্ত্রী। আমার পরিবার যদি দুর্নীতিই করত, তাহলে আমরা দেশের মানুষকে কিছু দিতে পারতাম না। আমরা দেশের মানুষকে দিতে এসেছি, মানুষের জন্য করতে এসেছি। এ কারণেই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কেউ নষ্ট করবে, এটা অন্তত আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে মেনে নিতে পারি না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করব। আমি ধন্যবাদ জানাই, কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি, তারাই আমাকে সাহস দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতেু করেছি। শুধু পদ্মা সেতুই না, তিনটা এয়ারপোর্ট আন্তর্জাতিক মানের আওয়ামী লীগের করা, চতুর্থটা হচ্ছে কক্সবাজারে। সারা দেশে রাস্তাঘাট, ব্রিজ করেছে আওয়ামী লীগ। কিছুদিন আগে ১০০টা সেতু, ১০০টা সড়কের উন্নয়ন আমরা করেছি।

উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, এমন উন্নয়নকাজ কোনো দিন কোনো সরকার কি পেরেছে? আপনারাই বলেন? আওয়ামী লীগ সরকার পেরেছে। আমরাই পেরেছি।

জাতির পিতা ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ঘর করতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু সেটা সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। তাই ৯৬ থেকে আমরা শুরু করেছি ভূমিহীন মানুষদের ঘর করে দেয়া। আজকে ৩৫ লাখ মানুষ বিনামূল্যে ২ কাঠা জমি এবং ঘর ও জীবন জীবিকার সুযোগ পাচ্ছে। সেটা আমরা করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, আওয়ামী সরকার দেশের উন্নয়নে কাজ করছে। দেশকে বিদ্যুতের স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।

আওয়ামী লীগপ্রধান বলেন, ভোট দেয়ার অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার- আওয়ামী লীগই নিশ্চিত করেছে। আওয়ামী লীগের স্লোগান ছিল- আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। আমরা নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছি। তাদের আর্থিক সক্ষমতা তাদের হাতে দিয়ে দিয়েছি। তারা যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সেই সুযোগ করে দিয়েছি। সবাইকে ভোটার আইডি কার্ড করে দিয়েছি। নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন-২০২২ করে দিয়েছি।
 
তিনি আরও বলেন, আমাদের যদি ভোট চুরির নিয়ত থাকতো, তাহলে তো খালেদা জিয়ার মতো আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন করতে পারতাম। আমরা সেটা করি নাই। আওয়ামী লীগ কখনো নির্বাচন কমিশনে হস্তক্ষেপ করেনি। কেননা আমরা ভোটে বিশ্বাসী।

সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের উন্নয়ন অর্জন বাঁচাতে হলে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, আর বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, গত ৪৭ বছরের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা শেখ হাসিনা। সাহসী রাজনীতিক, দক্ষ প্রশাসক ও কূটনীতিকের নাম শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা আছেন বলেই পদ্মা সেতুর নির্মাণ সম্ভব হয়েছে।

বিএনপিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাদের মনে বড় জ্বালা, বড়ই অন্তর্জ্বালা। শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু করেই ফেলল। ২৮ তারিখ মেট্রোরেল উদ্বোধন করবেন। এই জ্বালা আর সইতে পারে না। নির্বাচন করলে তারা জিততে পারবে না। সেই জন্য সরকার হটানোর ষড়যন্ত্র করছে। শেখ হাসিনাকে ২০বার হত্যার চেষ্টা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে হটাতে পারলে ময়ূর সিংহাসন ফিরে পাবে, সেই আশা করছে তারা।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ভোট চুরির বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, ভোট জালিয়াতির বিরুদ্ধে, ভুয়া ভোটারের বিরুদ্ধে, লুটপাটের বিরুদ্ধে, হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে খেলা হবে। নির্বাচনেও খেলা হবে, আন্দোলনেও হবে।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি আপনারা ঐক্যবদ্ধ হোন। সবার বিশ্বস্ত ঠিকানা শেখ হাসিনা। আগুন সন্ত্রাসকে রুখতে, জঙ্গিবাদ রুখতে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই।

বর্ণাঢ্য আয়োজনে সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। 

দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেই সঙ্গে ৭৮টি সাংগঠনিক ইউনিটের পক্ষ থেকেও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

এর আগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন তিনি। পরিবেশিত হয় জাতীয় সংগীত। পায়রা ওড়ানোর পর বেলুন উড়িয়ে শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন।

সকাল ১০টা ২০ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলন মঞ্চে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগপ্রধান।

সম্মেলনস্থলে পদ্মা সেতুর ওপরে নৌকার আদলে তৈরি করা মূল মঞ্চের মাঝখানের চেয়ারে বসেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। 

মঞ্চের পেছনের ব্যানারে শোভা পায় পদ্মা সেতু। তারপর জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ছবি। স্মৃতিসৌধের বাম পাশে শোভা পায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। তার বামে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি। 

এছাড়া বামে আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শামসুল হক ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ছবি।

বাউন্ডারির ব্যানারে শোভা পায় কর্ণফুলী টানেল, পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, চট্টগ্রাম বন্দর, ফ্লাইওভার, পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, ভাঙ্গা চৌরাস্তা, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছবি।

উদ্যানের লেকপাড়েও করা হয় প্যান্ডেল। ওই প্যান্ডেলেও দেওয়া হয় তিনটি বড় স্ক্রিন। সেখানে চেয়ারগুলো এমনভাবে সাজানো হয় যেন পেছনের কারও কোনো অসুবিধা না হয় স্ক্রিন দেখতে। নিরাপত্তার জন্য পুরো এলাকায় প্রায় শতাধিক সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য চারুকলার সামনের ছবির হাটের ফটক, টিএসসির ফটক, বাংলা একাডেমির সামনের ফটক, তিন নেতার মাজার সংলগ্ন ফটকে আর্চওয়ে বসানো হয়৷ সেখানে তল্লাশি করে সবাইকে উদ্যানে ঢুকতে দেওয়া হয়।

সম্মেলনে সারা দেশ থেকে সাড়ে সাত হাজার কাউন্সিলর ও সাড়ে সাত হাজার প্রতিনিধি যোগ দিতে পারলেও উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দিতে গাড়ি-লঞ্চ ভর্তি হয়ে ঢাকা এসেছেন আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মী।

তারা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে নামার পর মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রওনা হন। কোনো কোনো জেলা থেকে নেতা-কর্মী এক দিন আগেই ঢাকায় পৌঁছান। তারাও সকাল থেকে ছুটে যান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বক্তৃতামালা চলে বেলা প্রায় ১টা পর্যন্ত। এরপর বিরতির ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আমরা প্রথম অধিবেশনের মুলতবি করছি, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে দ্বিতীয় অধিবেশন বসবে। সেখানে নতুন নেতৃত্ব আসবে। আজকে থেকে আমাদের বিদায়। সভাই ভালো থাকবেন।