ঢাকা, ২৭ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
২৮৭

প্রথম দিনে আফগানদের আধিপত্য

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:০৬ ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেল আফগানিস্তান। সেটি করলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান রহমত শাহ। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে দেশের প্রথম সেঞ্চুরির মালিক হলেন তিনি। রহমতের মতো এই টেস্টে স্মরণীয় কীর্তি গড়েছেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক রশিদ খান। সবচেয়ে কম বয়সে টেস্টে অধিনায়কত্ব করার বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন তিনি। রহমত-রশিদের এমন স্মরণীয় কীর্তিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টের প্রথম দিন শেষে ৯৬ ওভারে ৫ উইকেটে ২৭১ রান করেছে সফরকারীরা। রহমত ১০২ রানে আউট হন। ৮৮ রানে অপরাজিত আছেন সাবেক অধিনায়ক আসগর আফগান। বাংলাদেশের হয়ে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও নাইম হাসান। ২ উইকেট শিকারে বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুত ১০০ উইকেট নেয়ার রেকর্ড গড়েছেন তাইজুল।
ম্যাচের আগের দিনই স্পষ্ট ছিল, চট্টগ্রামের উইকেট হতে যাচ্ছে স্পিন রাজ্য। তাই একাদশে স্পিনারদের প্রাধান্য থাকেব বোঝাই যাচ্ছিল। তবুও আশা ছিল, অন্তত একটি পেসার তো খেলবেনই। কারণ, স্পিন রাজ্য হওয়ার পরও তিন বছর আগে দেশের মাটিতে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে একজন করে পেসার খেলানো হয়েছিল। তাই আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে কে হবেন সেই ভাগ্যবান পেসার? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলও চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে এবং দলের ভেতরে।
অবশেষে সকালে সবল উদ্বেগের অবসান ঘটলো। তবে চোখ কপালে উঠে যাওয়ার মতোই ঘটনা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দলে নেই কোনও পেসার। চারজন বিশেষজ্ঞ স্পিনারের সঙ্গে দু’জন অকেশনাল। অর্থাৎ মোট ছয়জন স্পিনার। মিডিয়াম পেসার বলতে ছিলেন সৌম্য সরকার। তাই এই টেস্টে পেসারদের টিপস দেয়ার মতো কোনও ঝক্কি ঝামেলা নেই পেস বোলিং কোচ চার্ল ল্যাঙ্গাভেল্ডটের। ঘুরে ফিরে আগামী পাঁচদিন অনায়াসে কাটিয়ে দিতে পারবেন তিনি।
যাই হোক, স্পিন নির্ভর বাংলাদেশের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জ নিতে টস জিতে প্রথমেই ব্যাটিং বেছে নেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক রশিদ খান। অধিনায়ক হওয়ার পর এটিই তার প্রথম ম্যাচ। তবে বিরল বিশ্বরেকর্ডের মালিক হলেন তিনি। সবচেয়ে কম ২০ বছর ২৫০ দিন বয়সে টেস্টে জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেয়ার বিশ্বরেকর্ড গড়েন।
রশিদের বিশ্বরেকর্ডের আবহ’র মাঝে সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে থাকা বাঁহাতি স্পিনার তাইজুলকে দিয়ে বাংলাদেশের বোলিং শুরু করেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তবে নিজেও থেমে থাকেননি। পরের ওভারে অপরপ্রান্ত দিয়ে নিজেও চলে আসেন আক্রমণে। ফলে টেস্ট ক্রিকেটের ১৪২ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম ম্যাচের দুই প্রান্ত দিয়ে বাঁহাতি স্পিনাররা আক্রমণ শুরু করলেন।
পিচের অবস্থা কিছুক্ষণ বুঝে ফেলার পর প্রথম ১২ ওভারে দলের চার বিশেষজ্ঞ স্পিনারকে ব্যবহার করে ফেলেন সাকিব। মেহেদি হাসান মিরাজ ও নাইম হাসানকে দিয়ে হাত ঘুরান তিনি।
বাংলাদেশের চার স্পিনারকে প্রথম ১২ ওভারে দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিয়েছেন আফগানিস্তানের দুই ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান ও এহসানউল্লাহ। এতটাই সর্তক ছিলেন যে, ১২ ওভারে মাত্র ১৯ রান তুলেন তারা। কিন্তু ১৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন তাইজুল। মিডল ও লেগ স্টাম্পের মাঝে বলকে পিচ করান তাইজুল। ব্যাকফুটে গিয়ে তার ঘুর্ণিকে সামলাতে না পেরে বোল্ড হন এহসানউল্লাহ। এই উইকেট শিকারের সঙ্গে টেস্ট ক্যারিয়ারের বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুত ১’শ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েন তিনি। আগের রেকর্ডটি ছিল সাকিবের। নিজের ২৮তম ম্যাচে ১’শ উইকেট শিকার করেন তিনি। আর তাইজুল করলেন ২৫তম ম্যাচে। মোহাম্মদ রফিক ও সাকিবের পর দেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে টেস্টে ১’শ উইকেট শিকার করলেন তাইজুল।
১৯ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর দলকে সামনে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার জাদরান ও রহমত। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারেননি তারা। দ্বিতীয় উইকেটে মাত্র ২৯ রানের জুটি গড়েন জাদরান ও রহমত। ২১ রান করা জাদরানকেও শিকার করেন উইকেট শিকারে সেঞ্চুরি করা তাইজুল।
জাদরানের সঙ্গে না পারলে চার নম্বরে নামা হাসমতউল্লাহ শাহিদির সঙ্গে বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করেন রহমত। কিন্তু এই জুটিও ২৯ রানের বেশি করতে পারেনি। পঞ্চম বোলার হিসেবে আক্রমণে এসে ১৪ রান করা শাহিদিকে ফিরিয়ে দেন মাহমুউল্লাহ রিয়াদ।
৭৭ রানে ৩ উইকেট পতনের পর চাপে পড়ে গিয়েছিল আফগানিস্তান। এ অবস্থায় প্রতিপক্ষকে চেপে ধরার পরিকল্পনা করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব। আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং-এর পাশাপাশি দুই প্রান্ত দিয়ে বোলিং পরিবর্তন করেন তিনি। কিন্তু তার পরিকল্পনায় পানি ঢেলে দেন রহমত ও সাবেক অধিনায়ক আসগর। বাংলাদেশ বোলারদের সামনে ব্যাট হাতে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন তারা। দুর্দান্ত ব্যাটিং নৈপুন্যে টাইগার স্পিন বিষে কাবু হননি রহমত-আসগর। তাই দলের স্কোর ২’শর কাছাকাছি পৌঁছেও যায়।
তবে এসময় আফগানিস্তানের স্কোরের চেয়ে সবার মধ্যমনি ছিলেন রহমত। কারণ, নিজের সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে ছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে টেস্ট আফগানিস্তানের প্রথম সেঞ্চুরির অপেক্ষা। অবশেষে টেস্টে আফগানিস্তানকে প্রথম সেঞ্চুরি এনে দেন রহমত। নিজেদের ইনিংসের ৭০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে নাইমকে বাউন্ডারি মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। নিজের ১৮৬তম বলে সেঞ্চুরি করেন রহমত। টেস্ট ফরম্যাটে দেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখলেন তিনি। এমন দুর্দান্ত অর্জনের পরই আউট হয়ে যান তিনি। নাইমের বলে সৌম্যকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। ১০টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৮৭ বলে ১০২ রান করেন রহমত।
দলীয় ১৯৭ রানে ও ৭০তম ওভারের তৃতীয় বলে তকে শিকারের পর আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে বাংলাদেশ। দলের সেই আত্মবিশ্বাস দ্বিগুন করে দেন নাইম। ওই ওভারের শেষ বলে আফগানিস্তানের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ নবীকে শুন্য হাতে ফিরিয়ে দেন তিনি। বোল্ড হন নবী। এমন অবস্থায় ৩ বলের ব্যবধানে ও দলীয় ১৯৭ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে মহাচিন্তায় পড়ে যায় আফগানিস্তান।
তবে আফগানদের বেশিক্ষণ চিন্তায় রাখেননি আসগর ও উইকেটরক্ষক আফসার জাজাই। দ্রুতই উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে বাংলাদেশ বোলারদের পরিকল্পনা বুঝে ফেলেন তারা। দিনের শেষভাগে কোনও সাফল্য পায়নি টাইগাররা। ফলে ৭৪ রানে অবিচ্ছিন্নই থেকে যান আসগর-জাজাই জুটি। নিজের প্রথম ও দেশের হয়ে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করা থেকে ১২ রান দূরে থেকে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেন আসগর। তার ১৬০ বলের ইনিংসে ৩টি চার ও ২টি ছক্কা ছিল। জাজাই ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৯০ বলে অপরাজিত ৩৫ রান করেন।

খেলাধুলা বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর