ঢাকা, ১২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার, ২০২৫ || ২৮ ভাদ্র ১৪৩২
good-food
৬৩২

ইংল্যান্ডের মাটি অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর সাহস জোগাচ্ছে বাংলাদেশকে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:৪৫ ১৯ জুন ২০১৯  

ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের মাত্র একটি জয়। সেটি আবার ইংল্যান্ডের মাটিতে। ২০০৫ সালের ১৮ জুন। ভেন্যু- কার্ডিফ। ১৪ বছর পর আবারো সেই জয়ের স্মৃতি টাইগারদের  উজ্জীবিত করছে। কারণ, বৃহস্পতিবার দ্বাদশ বিশ্বকাপের লিগ পর্বে নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচ খেলতে নামছে বাংলাদেশ। ম্যাচে টাইগারদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। তাই ১৪ বছর আগের সুখস্মৃতি ইংলিশ কন্ডিশনে অজিদের আবারো হারানোর সাহস দিচ্ছে মাশরাফিদের। বিশ্বকাপের ২৬তম ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া। নটিংহামে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৩টায়।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ যাবত ২০টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে মাত্র ১টি ম্যাচ জিতেছে টাইগাররা। সেটিও ১৪ বল আগে। কার্ডিফে ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল তারা। টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেয় অস্ট্রেলিয়া। বল হাতে নিজেদের বোলিং শুরু করেই তাদের চেপে ধরেন দুই পেসার মাশরাফি বিন মুর্তজা তাপস বৈশ্য। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ওপেনার অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে শূন্য হাতে বিদায় দেন মাশরাফি। আর ইনিংসে ৩২তম বলে অস্ট্রেলিয়ার তখনকার অধিনায়ক রিকি পন্টিংকে আউট করেন তাপস। এতে দলীয় রানে উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া।
সেই চাপ সামাল দিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের লড়াইয়ে ফিরিয়েছিলেন আরেক ওপেনার ম্যাথু হেইডেন, দুই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান ডেমিয়েন মার্টিন মাইকেল ক্লার্ক। হেইডেন ৩৭ রানে থামলেও, হাফসেঞ্চুরির স্বাদ নেন মার্টিন ক্লার্ক। মার্টিন ১১২ বলে ৭৭ ক্লার্ক ৮৪ বলে ৫৪ রান করেন। বাংলাদেশের আঁটসাঁট বোলিংয়ে ধীরগতির ব্যাটিং করতে বাধ্য হন তারা। তাই অস্ট্রেলিয়ার বড় সংগ্রহের আশা শেষ হয়ে যায় এই জুটির রক্ষণাত্মক ব্যাটিংয়ে। তবে শেষদিকে মাইক হাসির ২১ বলে ৩১ সাইমন ক্যাটিচের ২৩ বলে ৩৬ রানের সুবাদে ৫০ ওভারে উইকেটে ২৪৯ রানের সংগ্রহ পায় অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশের বৈশ্য ১০ ওভারে ৬৯ রানে উইকেট নেন। এছাড়া মাশরাফি ১০ ওভারে ৩৩ রানে এবং স্পিনার মোহাম্মদ রফিক উইকেটশুন্য থাকলেও ১০ ওভারে দেন ৩১ রান।
২৫০ রানের জয়ের লক্ষ্যে ৭২ রান তুলতে উইকেট হারিয়ে কিছুটা চিন্তায় পড়ে বাংলাদেশ। তবে দলের চিন্তা দূর করেন মোহাম্মদ আশরাফুল। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন অ্যাশ। তাকে সঙ্গ দেন তখনকার অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন। চতুর্থ উইকেটে দুজনে ১৩৯ বলে ১৩০ রান যোগ করলে ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন টাইগাররা। দলীয় ২০২ রানে হাবিবুল ফিরলেও ম্যাচেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ নেন আশরাফুল। ব্যক্তিগত সমান ১০০ রানেই থেমে যান তিনি। তার ১০১ বলের ইনিংসে ১১টি চার ছিল। ৪৭ দশমিক ওভারে দলীয় ২২৭ রানে দলের পঞ্চম ব্যাটম্যান হিসেবে আউট হন আশার ফুল।ওই সময় জয়ের জন্য ১৭ বলে ২৩ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। দলের এই বাকী প্রয়োজনটুকু পরে মিটিয়ে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের ৫ উইকেটে অবিস্মরণীয় এক জয়ের স্বাদ দেন আফতাব আহমেদ মোহাম্মদ রফিক। ২টি চার ১টি ছক্কায় আফতাব ১৩ বলে ২১ রফিক ২টি চারে বলে রানে অপরাজিত থাকেন।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওই জয় এখন আত্মবিশ্বাসের রসদ বাংলাদেশের জন্য। বিশ্বকাপের মঞ্চে খেলায় পয়েন্ট নিয়ে এখন টেবিলের পঞ্চম স্থানে টাইগাররা। সেমিফাইনালে খেলার পথে ভালোভাবে টিকে থাকতে হলে অজিদের বিপক্ষে জয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। যেমনটা ছিল আগের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে উইকেটের জয়। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে জয়ে সেমিতে খেলার পথে ভালোভাবেই টিকে আছে টাইগাররা।
টনটনে গত ১৭ জুন টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে উইকেট হারিয়ে ৩২১ রান করে উইন্ডিজ। এত বড় টার্গেট পেয়ে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে কখনো জয় পায়নি বাংলাদেশ। তবে সেদিন দলকে এত বড় রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ের স্বাদ এনে দেন সাকিব আল হাসান লিটন দাস।

৩২২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ১৯ ওভারে ১৩৩ রানে উইকেট হারায় বাংলাদেশ। অর্থাৎ, ম্যাচ জয়ের জন্য ৩১ ওভারে হাতে উইকেট নিয়ে আরও ১৮৯ রান করতে হতো। কিছুটা শঙ্কিতই হয়তো ছিল লাল-সবুজ শিবির। কিন্তু ২২ গজে বেশ নির্ভার ছিলেন সাকিব। কারণ, সেরা মঞ্চে ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মেই রয়েছেন তিনি। লিটনকে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের লাইন-লেন্থকে তছনছ করে দেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তুলে নেন এবারের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। সাকিবের সেঞ্চুরির পর নিজের বিধ্বংসী রুপ দেখান লিটন। তাদের রুদ্রমুর্তিতে ৫১ বল বাকী রেখে ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ। চতুর্থ উইকেটে ১৩৫ বলে অবিচ্ছিন্ন ১৮৯ রান যোগ করেন তারা।
সাকিব ১৬টি চারে ৯৯ বলে ১২৪ এবং লিটন ৮টি চার ৪টি ছক্কায় ৬৯ বলে ৯৪ রানে অপরাজিত থাকেন। সাকিবের ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি ছিল সেটি। বল হাতেও উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। তাই ম্যাচসেরা হন সাকিব।
সাকিব-লিটনের ব্যাটিং নৈপুন্যে জয়ের ধারায় ফিরে আত্মবিশ্বাসী এখন বাংলাদেশ। তবে সেমিফাইনালের পথে খেলতে হলে পরের ম্যাচগুলোতে আরও ভালো খেলার ইচ্ছা সাকিবের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের পর তেমনটাই জানিয়েছেন তিনি।

তাই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও জয়ের জন্যমানসিক দৃঢ়তাঅনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য দুর্দান্তভাবে এবারের বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ। কেনিংটন ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারিয়ে এবারের বিশ্বকাপে পথচলা শুরু হয় টাইগারদের। তবে পরের তিনটি ম্যাচে হতাশা সঙ্গী হয় তাদের। ওভালে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে দুর্দান্ত লড়াইয়ের পর উইকেটে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াই- করতে পারেনি টাইগাররা। সাকিবের সেঞ্চুরির পরও ১০৬ রানে ম্যাচ হারে মাশরাফির দল। আর ব্রিস্টলের ভেন্যুতে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয় শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচটি। টানা তিন ম্যাচে জয়বঞ্চিত ছিল বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় দিয়ে আবারো জয়ের ধারায় ফিরে আসে টাইগাররা। ফলে জয়কে সঙ্গী করে এবার অস্ট্রেলিয়াকে চমকে দেয়ার প্রহর গুনছে বাংলাদেশ শিবির।
তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় তুলে নিতে দুর্দান্ত ক্রিকেটই খেলতে হবে বাংলাদেশকে। কারণ খেলায় জয়ে পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে অস্ট্রেলিয়া। শীর্ষে থাকা ইংল্যান্ডের সঙ্গে তাদের পয়েন্ট সমান। কিন্তু রান রেটে পিছিয়ে দ্বিতীয়স্থানে অজিরা। তাদের জয়গুলো এসেছে- আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান শ্রীলংকার বিপক্ষে। তবে ভারতের সঙ্গে লড়াইয়ে জিততে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। তাই দুর্দান্ত ফর্ম নিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষেও জয়ের প্রত্যাশা থাকছে ক্যাঙ্গারুদের।

খেলাধুলা বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর