ঢাকা, ০৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার, ২০২৫ || ২০ ভাদ্র ১৪৩২
good-food
৪৪১

তালেবানের দখলে স্টেডিয়াম, শঙ্কায় আফগান ক্রিকেট

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০০:২২ ১৭ আগস্ট ২০২১  

যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান। মাঝে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরলেও তালেবানরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।  ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে অবস্থা। তালেবান হামলার মুখে অকার্যকর হয়ে পড়ছে প্রাদেশিক রাজধানীগুলো। রাজধানী কাবুল দখলের পথে ছিল তালেবানরা। রোববার কাবুলের চারপাশ ঘিরে ফেলেছে তারা।  

 

প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছেন। জীবন বাঁচাতে ও নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ঘর-বাড়ি ফেলে দেশ ছাড়ছে হাজারও মানুষ। এর আগে দেশটির ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর, প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনিও কাবুল ছেড়েছেন। খবরে জানানো হয়েছে, তিনি তাজিকিস্তানে গেছেন।

 

পুরো আফগানিস্তান জুড়েই নৈরাজ্য। জীবন শঙ্কায় দিন পার করছেন না, আফগানিস্তানে এমন মানুষ আর নেই। এমন অবস্থায় দেশটির খেলাধুলার ভবিষ্যত প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে। আফগানদের গর্বের জায়গা ক্রিকেট, এই ক্রিকেটের ভবিষ্যত অন্ধকারে পড়ে গেছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ক্রিকেট স্টেডিয়াম তালেবানরা দখলে নিয়ে নিয়েছে বলে খবরে উঠে এসেছে। 

 

কয়েকদিন আগে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যমতে আগামী ৯০ দিনের মধ্যেই তালেবানের হাতে পতন ঘটতে পারে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের। রোববার চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলায় কাবুল দখলে নিতে হয়তো তো সময় নাও লাগতে পারে বলে খবর প্রকাশ করছে সংবাদমাধ্যমগুলো। 

 

কাবুলকে প্রধান লক্ষ্য বানিয়ে প্রাদেশিক রাজধানী দখল করে আসছিল তালেবানরা। তাদের দখলে চলে গেছে কান্দাহার, কুন্দুজ ও খোস্ত আগেই দখলে নিয়ে নিয়েছে তালেবানরা। এই তিন প্রদেশের পুরোটা দখলে নিয়ে নেওয়ায় এখানকার তিনটি ক্রিকেট স্টেডিয়ামও এখন তাদের দখলে। 

 

কেবল এই তিনটিই নয়, আরও কয়েকটি স্টেডিয়াম যেকোনো সময় চলে যাবে তালেবানদের দখলে। মাজার-ই-শরিফ ও কাবুলের দুটি স্টেডিয়াম দেখল নেওয়ার পথেই আছে তারা। জালালাবাদে গাজি আমানুল্লাহ ক্রিকেট স্টেডিয়াম তালেবানদের হাতের মুঠোয় চলে যাবে যেকোনো সময়ে। 

 

আগামী অক্টোবরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সংক্ষিপ্ততম এই ফরম্যাটের বিশ্বকাপের মূল পর্বে সরাসরি খেলবে র‌্যাঙ্কিয়ের সাত নম্বরে থাকা আফগানিস্তান। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি নেওয়ার মতো অবস্থাই নেই দেশটিতে। এমন যুদ্ধের সময় মাঠে গিয়ে ক্রিকেট অনুশীলন করার ব্যাপারটি হয়তো কেউ-ই সমর্থন করবে না। এ ছাড়া স্টেডিয়াম বেদখল হয়ে পড়ায় সেই সুযোগও নেই। সব মিলিয়ে আফগান ক্রিকেটের ভবিষ্যত শঙ্কায় পড়ে গেছে।

 

যদিও ক্রিকেটের সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই বলে বক্তব্য দিয়েছেন তালেবানদের এক শীর্ষ নেতা। তিনি জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে ক্রিকেট তারাই এনেছিলেন। পাকিস্তানের একটি সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, 'আমরা ক্রিকেটের বিপক্ষে নই, আমরা ক্রিকেটের আরও উন্নতি করব। আফগানিস্তানে আমরাই ক্রিকেট এনেছিলাম, এটা ভুলে গেলে চলবে না।'

 

আফগান ক্রিকেটের দুই তারকা রশিদ খান ও মোহাম্মদ নবী এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডে দ্য হান্ড্রেড খেলছেন। দূরে থাকলেও দেশের উত্তাল অবস্থা দেখে মানসিকভাবে কঠিন অবস্থা পার করতে হচ্ছে তাদের। কদিন আগে রশিদ খান বিশ্ব নেতাদের কাছে আর্জি রেখেছিলেন, যেন আফগানদের হত্যা করা এবং আফগানিস্তানকে ধ্বংস করা বন্ধ করা হয়।। 

 

বিশ্ব নেতাদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে টুইটে তিনি লিখেছিলেন, 'প্রিয় বিশ্বনেতারা, আমার দেশ বিশৃঙ্খলার মধ্যে আছে। শিশু, মহিলাসহ হাজার হাজার নির্দোষ মানুষ প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন। ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি ধ্বংস হচ্ছে, হাজার হাজার পরিবার ঘরহারা হয়ে পড়ছে। এমন বিশৃঙ্খলার মধ্যে আমাদের ছেড়ে যাবেন না। আফগানদের হত্যা করা এবং আফগানিস্তানকে ধ্বংস করা বন্ধ হোক। আমরা শান্তি চাই।'

 

মোহাম্মদ নবী লেখেন, 'আফগান হিসেবে প্রিয় দেশকে এমন অবস্থায় দেখে রক্তক্ষরণ হচ্ছে আমার। আফগানিস্তানে নৈরাজ্য চলছে, বিশৃঙ্খলা বেড়ে গেছে, দুঃখজনক ঘটনা বেড়ে গেছে। মানবতা আজ সংকটাপন্ন সেখানে। মানুষ ঘর ছেড়ে কাবুলে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে পাড়ি জমাচ্ছে। আমি বিশ্বের নেতাদের কাছে আবেদন করি, তারা যেন আফগানিস্তানকে এমন অবস্থায় ছেড়ে না যান।'

খেলাধুলা বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর