ঢাকা, ০৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৫ || ২৫ ভাদ্র ১৪৩২
good-food
৪১০

মিরাজের সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় দিন শেষে ৩৫৫ রানে এগিয়ে বাংলাদেশ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:৪৮ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

মেহেদি হাসান মিরাজের প্রথম সেঞ্চুরিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ৩৫৫ রানে এগিয়ে বাংলাদেশ। মিরাজের সেঞ্চুরিতে ভর করে প্রথম ইনিংসে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৪৩০ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে স্বাগতিকরা। 


জবাবে নিজেদের ইনিংস শুরু করে দিন শেষে ২৯ ওভারে ২ উইকেটে ৭৫ রান করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয়দের পতন হওয়া ২টি উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে ১০৩ রানে আউট হন মিরাজ। এছাড়া সাকিব আল হাসান ৬৮, ওপেনার সাদমান ইসলাম ৫৯ ও মুশফিকুর রহিম-লিটন দাস ৩৮ রান করে করেন।


প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৫ উইকেটে ২৪২ রান। সাকিব ৩৯ ও লিটন ৩৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। দিনের ১৪তম বলে বিদায় নেন লিটন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফল বাঁহাতি স্পিনার জোমেল ওয়ারিকানের ঘুর্ণি সামলাতে না পেরে বোল্ড হন তিনি। ৬৭ বলে ৬ চারে ৩৮ রান করে ওয়ারিকানের চতুর্থ শিকার হন ডানহাতি ব্যাটার।


গতকাল ১৯৩ রানে পঞ্চম উইকেট পতনের পর সাকিবের সাথে অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে স্বস্তিতে দিন শেষ করতে বড় ভূমিকা রাখেন লিটন। দ্বিতীয় দিন সাকিবের সাথে জুটি বড় করতে পারেননি তিনি। শেষমেষ ১০৯ বলে ৫৫ রানের জুটি গড়েছেন তারা। বাংলাদেশের ইনিংসে এটি ছিলো তৃতীয় হাফসেঞ্চুরির জুটি।

 

পঞ্চম উইকেটে সাকিব-মুশফিকের ১০৮ বলে ৫৯ রান ছিলো ইনিংসের সেরা জুটি। এই জুটিকে ছাপিয়ে গেছেন সাকিব ও মিরাজ। সপ্তম উইকেটে ১৩০ বলে ৬৭ রান যোগ করেন তারা।

 

উইন্ডিজের বোলারদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে ১১০তম ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ৩শ’ স্পর্শ করেন সাকিব-মিরাজ। এর আগে ওয়ারিকানের করা ৯৭তম ওভারের পঞ্চম বলে ১ রান নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৫তম হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সাকিব। নিষেধাজ্ঞার পর টেস্টে ফিরেই হাফসেঞ্চুরির দেখা পেলেন তিনি।

 

তবে হাফসেঞ্চুরির পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের দীর্ঘদেহী স্পিনার রাকিম কর্নওয়ালের বলে বিদায় নেন সাকিব। হালকা লাফিয়ে ওঠা বলে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে প্রতিপক্ষের অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ২৩১ মিনিট ক্রিজে থেকে ৫ চারে ১৫০ বলে নিজের নান্দনিক ইনিংসটি সাজান সাকিব। নিজের ২৫তম ওভারে এসে প্রথম উইকেট পেলেন কর্নওয়াল।

 

এরপর মিরাজের সাথে জুটি বেঁধে মধ্যাহ্ন-বিরতি পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন থাকেন তাইজুল ইসলাম। ৯৩ বলে ৭ চারে ৪৬ রানে অপরাজিত থেকে বিরতিতে যান মিরাজ। ২১ বলে ৫ রানে অপরাজিত ছিলেন তাইজুল।

 

বিরতি থেকে ফিরেই টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মিরাজ। তার হাফসেঞ্চুরির পর ব্যক্তিগত ১৮ রানে বিদায় নেন তাইজুল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার শ্যানন গাব্রিয়েলের বলে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দেন তিনি। তাইজুল-মিরাজ জুটি ১১৭ বলে ৪৪ রান স্কোর বোর্ডে জমা করেন।

 

আউটের পর ১০ নম্বর ব্যাটসম্যান নাইম হাসানকে নিয়ে দলের স্কোর বাড়াতে থাকেন মিরাজ। ব্যক্তিগত ৭১ রানে জীবনও পান তিনি। স্টাম্পিংয়ের হাত থেকে বাঁচেন মিরাজ।  অন্যপ্রান্তে বেশ সাবলীল ব্যাট করতে থাকেন নাইম। ১৪০তম ওভারে ওয়ারিকানকে তিনটি চার মারেন তিনি। আর ১৪৩ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ৪শ’তে পৌঁছায়। ২২তমবারের মতো নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে ইনিংসে চারশত রান করতে সক্ষম হলো বাংলাদেশ।

 

মিরাজ নার্ভাস-নাইন্টিতে পা দেয়ার পর আউট হন নাইম। ৪৬ বলে ৪ চারে ২৪ রান করে এনক্রুমার বোনারের শিকার হন তিনি। তখন ৯২ রানে দাঁড়িয়ে মিরাজ। দলের স্কোর ৯ উইকেটে ৪১৬। এতে তার সেঞ্চুরি নিয়ে শংকা জাগে। কারণ, বাংলাদেশের হাতে শেষ উইকেট। 

 

মিরাজের প্রয়োজন ছিলো ৮ রান। শেষ পর্যন্ত ১৪৭তম ওভারের চতুর্থ বলে ওয়ারিকানের ডেলিভারিতে প্যাডেল সুইপে ২ রান তুলে ১৬০তম বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৩তম ম্যাচে প্রথম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। আট নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করা চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে রেকর্ড বইয়ে নাম তুলেন মিরাজ। এর আগে ২০০৪ সালে খালেদ মাসুদ, ২০১০ সালে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও ২০১৩ সালে সোহাগ গাজী আট নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে সেঞ্চুরি করেছিলেন।

 

সেঞ্চুরির পর বেশি দূর নিজের ইনিংসকে টানতে পারেননি মিরাজ। দলীয় ৪৩০ রান শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে লং-অনে ক্যাচ দিয়ে কর্নওয়ালের দ্বিতীয় শিকার হন তিনি। ২২৪ মিনিট ক্রিজে থেকে ১৬৮ বল খেলে ১৩ চার মারেন মিরাজ। ১১ বলে ৩ রানে অপরাজিত থাকেন মুস্তাফিজ।

 

ক্যারিবীয়দের হয়ে ওয়ারিকান ১৩৩ রানে ৪ উইকেট নেন। এছাড়া কর্নওয়াল ২টি, রোচ-গ্যাব্রিয়েল-বোনার ১টি করে উইকেট শিকার করেন। মিরাজের আউটে টাইগারদের ইনিংস শেষ হওয়ার পরই চা-বিরতির ডাক দেন আম্পায়াররা। চা-বিরতি পর নিজেদের ইনিংস শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম ৪ ওভার ভালোভাবেই কাটিয়ে দেন সফরকারী দুই ওপেনার অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ও জন ক্যাম্পবেল। 


পঞ্চম ওভারে বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট শিকারের স্বাদ দেন একাদশের একমাত্র পেসার মুস্তাফিজ।
ক্যাম্পবেলকে (৩) লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন তিনি। প্রথম উইকেট পতনের পর সর্তক হয়ে পড়েন ব্র্যাথওয়েট ও তিন নম্বরে নামা শায়নে মোসলে। তবে এ জুটিকে উইকেটে থিতু হতে দেননি মুস্তাফিজ। ২ রান মোসলেকে লেগ বিফোর আউট করেন ফিজ। ফলে দলীয় ২৪ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।


এরপর অবশ্য বাংলাদেশ বোলারদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ব্র্যাথওয়েট ও বোনার। তৃতীয় উইকেটে ৫১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দিন শেষ করেন তারা। ব্র্যাথওয়েট ৪৯ ও বোনার ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন।
বাংলাদেশের মুস্তাফিজ ১৮ রানে ২ উইকেট নেন। বল হাতে হাত উইকেট শুন্য ছিলেন দলের চার স্পিনার সাকিব-মিরাজ-তাইজুল ও নাইম।

খেলাধুলা বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর