ঢাকা, ২৭ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৫৮৪

লড়ে হারলো বাংলাদেশ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১১:২৫ ৬ জুন ২০১৯  

বর্তমান ক্রিকেটে ২৪৪ রানের স্কোরটা সাদামাটাই বলা যায়। তবু এই স্কোর নিয়েই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াই চালিয়ে গেল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়টা আর এলো না। বুক চিতিয়ে লড়াই করে ওভালের ম্যাচটি ২ উইকেটে হারলো বাংলাদেশ।

 

সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছেন টাইগার বোলাররা। আর তাই তো ২৪৪ রানও নিউজিল্যান্ডের কাছে হয়ে দাঁড়িয়েছিল ‘পাহাড়-সমান’। যে পথ পাড়ি দিতে কিউইদের খেলতে হয়েছে ৪৭.১ ওভার, আর হারিয়েছে ৮ উইকেট। কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ও জিমি নিশামের আউটের পর তো বাংলাদেশের দিকেই জয়ের পাল্লা ভারি ছিল। কিন্তু মিচেল স্যান্টনার তা হতে দেননি, হার না মানা ১৭ রানের ইনিংস খেলে দলের জয় নিশ্চিত করে ছেড়েছেন মাঠ।

 

৮২ রান করা রস টেলরের সঙ্গে কেন উইলিয়ামসনের ১০৫ রানের জুটি সবচেয়ে বড় বাধা হয়েছিল বাংলাদেশের জন্য। জুটিটা আগে ভাঙতে পারলে ম্যাচের দৃশ্যপট অন্যরকম হতেই পারতো। তবু ৪৪তম ওভারে নাটকীয়তা তৈরি হয়েছিল কয়েক বলের ব্যবধানে নিউজিল্যান্ডের শেষ দুই বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান গ্র্যান্ডহোম ও নিশাম আউট হলে।

 

তখনও জয়ের জন্য নিউজিল্যান্ডের দরকার ছিল ২৭ রান, হাতে ছিল ৩ উইকেট। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি বাংলাদেশের। বোলাররা তাদের সেরাটা দিলেও বিশ্বকাপে চরম উত্তেজনাকর ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

 

বোলিংয়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন সাকিব আল হাসান। এই স্পিনার ১০ ওভারে ৪৭ রান দিয়ে পেয়েছেন ২ উইকেট। তার মতো ২ উইকেট করে শিকার মেহেদী হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের।

 

 

চমৎকার এক ইনিংস খেলেছেন রস টেলর।  বাংলাদেশের বোলারদের দাপটের সামনে প্রতিরোধ গড়ে খেলেছেন তিনি ৮২ রানের ইনিংস। মূলত ওই ইনিংসটাই ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাধা। তাই ম্যাচসেরার পুরস্কারটা উঠেছে তার হাতেই।

 

 

ওভালের ম্যাচে টানটান উত্তেজনা। কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের পর প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছেন জিমি নিশাম। একটা সময় একেবারে হাতছাড়া হয়ে যাওয়া ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে আসে বাংলাদেশের হাতে।

 

রস টেলরের আউটের পর নিউজিল্যান্ডকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন গ্র্যান্ডহোম ও নিশাম। তবে সাইফউদ্দিন ও মোসাদ্দেক হোসেন ঘুরিয়ে দিয়েছেন ম্যাচের গতিপথ। ১৫ রান করা গ্র্যান্ডহোমকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন সাইফউদ্দিন। মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে ধরা পড়েন এই ব্যাটসম্যান।

 

পরের ওভারেই আবার উইকেট উৎসব। এবার মোসাদ্দেকের শিকারে পরিণত হন নিশাম। সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়ার আগে তিনি করেন ২৫ রান। তার আউটে আরও জমে যায় ওভালের ম্যাচটি।

 

 

ম্যাচে আরও উত্তেজনা তৈরি করলেন মোসাদ্দেক হোসেন। এই স্পিনারের বলে আউট হয়ে গেছেন রস টেলর। চমৎকার ব্যাটিংয়ে নিউজিল্যান্ডের রানের চাকা সচল রাখা এই ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছেন ৮২ রান করে, ৯১ বলের ইনিংসটি তিনি সাজিয়েছেন ৯ বাউন্ডারিতে।

 

বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা হয়েছিলেন টেলর। পথের এই কাঁটাকে সরিয়ে দিলেন মোসাদ্দেক। তার বলে সাবেক কিউই অধিনায়ক ধরা পড়েন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে।

 

 

কিছুতেই ভাঙা যাচ্ছিল না রস টেলর-কেন উইলিয়ামসনের জুটি। অবশেষে মেহেদী হাসান মিরাজের সৌজন্যে ভাঙে সেই জুটি। উইলিয়ামসনকে আউট করে শুধু জুটিই ভাঙলেন না, একই ওভারে টম ল্যাথামকে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে ‘ডাবল’ উৎসবে মাতলেন এই স্পিনার।

 

৩২তম ওভারের প্রথম বলে উইলিয়ামসনকে (৪০), আর শেষ বলে ল্যাথামকে (০) আউট করেন মিরাজ। এই স্পিনারের বল ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে এসে মোসাদ্দেক হোসেনের হাতে ধরা পড়েন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। তাতে টেলরের সঙ্গে ১০৫ রানের জুটি ভাঙে তার।

 

এখানেই থামলেন না মিরাজ। ওই ওভরের শেষ বলে ল্যাথামকে ফেরান রানের খাতা খোলার আগেই।‍ুকিউই উইকেটরক্ষককে ক্যাচ বানান তিনি মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের হাতে।

 

 

 

দারুণ শুরুর পর দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় নিউজিল্যান্ড। দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও কলিন মুনরোর বিদায়ের পর দলের হাল ধরেছেন অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান রস টেলর ও কেন উইলিয়ামসন।

 

বাংলাদেশের বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়েছেন তারা। মাশরাফি তার বোলিংয়ের কৌশল পাল্টেও ভাঙতে পারছেন না এই জুটি। এরইমধ্যে তৃতীয় উইকেটে ১০০ ছাড়ানো জুটি গড়েছেন টেলর-উইলিয়ামসন।

 

 

আবারও উইকেট উৎসব সাকিব আল হাসানের। এবার তিনি ফিরিয়েছেন কলিন মুনরোকে। আরেক ওপেনার মার্টিন গাপটিলও ছিল তার শিকার।

 

দারুণ ব্যাটিংয়ের পর বল হাতেও জ্বলে উঠেছেন সাকিব। গাপটিলের পর তিনি তুলে নিয়েছেন মুনরোকে। শুরু থেকেই ভুগতে থাকা কিউই ওপেনারকে বেশিদূর যেতে দেননি তিনি। মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যাচ বানিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়েছেন মুনরোকে। যাওয়ার আগে ৩৪ বলে ২৪ রান করে গেছেন তিনি।

 

 

 

বোলিংয়ে এসেই উইকেট তুলে নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। এই স্পিনার ফিরিয়েছেন বিধ্বংসী হয়ে ওঠা মার্টিন গাপটিল। তাতে নিউজিল্যান্ড হারিয়েছে প্রথম উইকেট।

 

গাপটিল দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডকে। আক্রণাত্মক ব্যাটিংয়ে কঠিন পরীক্ষা নিচ্ছিলেন তিনি বাংলাদেশি বোলারদের। তবে বল হাতে নিয়েই তাকে ফিরিয়েছেন সাকিব। নিজের প্রথম বলেই এই স্পিনার তুলে নিয়েছেন উইকেট। ১৪ বলে ২৫ রান করে তামিম ইকবালের হাতে ধরা পড়েন গাপটিল।

 

 

সাকিব আল হাসান তার ২০০তম ওয়ানডে স্মরণীয় করলেন হাফসেঞ্চুরি দিয়ে। কিন্তু শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডকে বড় কোনও লক্ষ্য দিতে পারেনি। বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে নিজেদের রেকর্ড স্কোর করা বাংলাদেশ গুটিয়ে গেছে ২৪৪ রানে, ৪৯.২ ওভারে শেষ হয় তাদের ইনিংস। কিউইদের লক্ষ্য ২৪৫ রান।

 

লন্ডনের ওভালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টস হেরে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। সর্বোচ্চ ৬৪ রানের ইনিংস খেলেন সাকিব আল হাসান। শেষ দিকে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ব্যাট থেকে আসে ২৯ রান। এছাড়া মোহাম্মদ মিঠুন (২৬), সৌম্য সরকার (২৫), তামিম ইকবাল (২৪) ও মুশফিকুর রহিম (১৯) ভালো শুরু করেও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি।

 

 

স্কোর:

 

বাংলাদেশ ২৪৪/১০ (৪৯.২)

 

তামিম ইকবাল ২৪ (৩৮)

সৌম্য সরকার ২৫ (২৫)

সাকিব আল হাসান ৬৪ (৬৮)

মুশফিকুর রহিম ১৯ (৩৫)

মোহাম্মদ মিঠুন ২৬ (৩৩)

মাহমুদুল্লাহ ২০ (১১)

মোসাদ্দেক হোসেন ১১ (২২)

সাইফুদ্দিন ২৯ (২৩)

মিরাজ ৭ (৯)

মাশরাফি ১ (২)

মোস্তাফিজুর ০* (০)

 

বোলার:

 

ম্যাট হেনরি ৯.২-০-৪৭-৪

ট্রেন্ট বোল্ট ১০-০-৪৪-২

লুকি ফার্গুসন ১০-০-৪০-১

কলিন ডি গ্রান্ডহোম ৮-০-৩৯-১

জেসম নিশাম ২-০-২৪-০

মিচেল স্যাটনার ১০-০-৪১-১

 

 

নিউজিল্যান্ড ২৪৮/৮ (৪৭.১)

 

গাপটিল ২৫ (১৪)

মুনরো ২৪ (৩৪)

উইলিয়ামসন ৪০ (৭২)

টেইলর ৮২ (৯১)

লাথাম ০ (৪)

নিশাম ২৫ (৩৩)

গ্রান্ডহোম ১৫ (১৩)

স্যাটনার ১৭* (১২)

হেনরি ৬ (৮)

লুকি ফার্গুসন ৪* (৩)

 

বোলার :

 

মাশরাফি ৫-০-৩২-০

মিরাজ ১০-০-৪৭-২

মোস্তাফিজ ৭.১-০-৪৮-০

সাকিব ১০-০-৪৭-২

সাইফুদ্দিন ৭-০-৪১-২

মোসাদ্দেক ৮-০-৩৩-২

 

ফল : নিউজিল্যান্ড ২ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা : রস টেইলর।

 

 

 

খেলাধুলা বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর