ঢাকা, ১৯ ডিসেম্বর শুক্রবার, ২০২৫ || ৪ পৌষ ১৪৩২
good-food
৩৯

শীত কি সত্যিই প্রেমের মৌসুম?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৪:০৬ ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫  

প্রতি বছর শরৎ শেষ হতে না হতেই শীতের ঠান্ডা মাসগুলোতে প্রেম ভালোবাসা নিয়ে একটা মজার ঘটনা ঘটে—যাকে বলে ‘কাফিং সিজন’।

এ সময় অনেক অবিবাহিত মানুষ হঠাৎ করে একটা রোমান্টিক সম্পর্ক খুঁজতে শুরু করেন, যাতে শীতটা একা না কাটাতে হয়। কিন্তু এর পেছনে কি সত্যিই কোনো বিজ্ঞান আছে, নাকি শুধুই সংস্কৃতি?

কাফিং সিজন আসলে কী?

গ্রীষ্মের স্বাধীনতা ও হালকা সম্পর্কের সময় শেষ হলে শীতকালে অনেক মানুষ একজন স্থায়ী বা অন্তত কাছের সঙ্গী খোঁজেন। শীতের দীর্ঘ রাত, কম আলো আর উৎসবমুখর পারিবারিক আয়োজন—সব মিলিয়ে সঙ্গের প্রয়োজনটা যেন বেশি অনুভূত হয়।

ঝলমলে আলোয় কারও সঙ্গে হাঁটা, কিংবা পারিবারিক অনুষ্ঠানের ভিড়ে কারও পাশে থাকা—এসবই আরামদায়ক মনে হয়। বিশেষ করে যখন কোনো আত্মীয় খেতে খেতেই জিজ্ঞেস করে বসে, “তা, তোমার প্রেমের খবর কী?, “তোমার গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড কোথায়?”

‘কাফিং সিজন’ শব্দটির সঠিক উৎস জানা না গেলেও ধারণা করা হয়, ২০০৯ সালের দিকে এটি জনপ্রিয় হয়। এখানে ‘কাফড’ বলতে বোঝানো হয়—একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়া।

কিন্তু মানুষ কি সত্যিই শীতের জন্য আলাদা করে সঙ্গী খোঁজে?

সম্পর্ক কি সত্যিই মৌসুমি?

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পুরোপুরি না। কিছু পুরনো গবেষণায় দেখা গেছে, পর্নোগ্রাফি, ডেটিং সাইট বা যৌনতা-সংক্রান্ত অনলাইন সার্চ বছরে দু’বার বাড়ে, একবার শীতে, আরেকবার গ্রীষ্মে।

১৯৯০–এর দশকের আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, শীতের সময় যৌন কার্যকলাপ (এমনকি ঝুঁকিপূর্ণ যৌনতাও) বেড়ে যায়।

শীতে অনেকের মন খারাপ হয় (সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার)। কম সূর্যের আলো পাই, সেরোটোনিন হরমোন কমে—মেজাজ খারাপ হয়। তখন মনে হয়, কারও কাছাকাছি থাকলে ভালো লাগবে।

ক্যালিফোর্নিয়ার সান হোসে স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ক্রিস্টিন মা-কেলামস বলেন, “কাফিং সিজন বলতে বোঝানো হয় মানুষের সম্পর্ক বা যৌন আচরণ নাকি মৌসুমি।”

গবেষণায় বিবাহের বাইরে জন্ম, গর্ভপাত, যৌনরোগ এবং কনডম বিক্রির তথ্য থেকে দেখা গেছে, শীতকালে যৌন কার্যকলাপ (এবং অরক্ষিত যৌনতা) বাড়ে।

ডেটিং অ্যাপ কী বলে?

ডেটিং অ্যাপগুলোর তথ্য স্পষ্ট: নভেম্বরের শেষ থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত মানুষ সবচেয়ে বেশি “সোয়াইপ” করে। গবেষকরা মজা করে বলেন—এটা ভ্যালেন্টাইনস ডে–এর ঠিক আগে সম্পর্ক ভাঙারও আদর্শ সময়।

শীতে ঘরে বেশি থাকি, বাইরে কম বের হই—তাই ফোনে নতুন মানুষ খোঁজা সহজ হয়।

শীতে মন খারাপ আর ভালোবাসা

শীতে অনেকের মন খারাপ হয় (সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার)। কম সূর্যের আলো পাই, সেরোটোনিন হরমোন কমে—মেজাজ খারাপ হয়। তখন মনে হয়, কারও কাছাকাছি থাকলে ভালো লাগবে।

প্রাণীজগত থেকে শিক্ষা

কিন্তু মানুষ অন্য প্রাণীর মতো মৌসুমী নয়। গরু বা পাখির মতো নির্দিষ্ট সময়ে প্রজনন করি না আমরা। সুযোগ পেলেই অনেকে সম্পর্কে জড়াতে চান—বছরের যেকোনো সময়।

জন্মহারের ওঠানামাও দেখায়—অনেক সময় ফসল কাটার পর বা উৎসবের পর জন্মহার বাড়ে, যা মূলত সামাজিক কারণে হয়, জৈবিক কারণে নয়।

ভালোবাসার হরমোন

অক্সিটোসিন নামে একটা হরমোন আছে, যাকে বলা হয় ‘লাভ হরমোন’। আলিঙ্গন, স্পর্শ বা ঘনিষ্ঠতায় এটা বাড়ে। এটি আমাদের একসঙ্গে থাকতে সাহায্য করে। শীতে এই হরমোনের চাহিদা বোধহয় একটু বেশি হয়।

সু কার্টার বলেন,“অক্সিটোসিন আমাদের কাছাকাছি আনে এবং একসঙ্গে থাকতে সাহায্য করে।”

ঠান্ডা আর শরীরের চাহিদা

শীতে শরীর ঠান্ডা লাগে, নারীরা সাধারণত ঠান্ডা বেশি অনুভব করেন, বিশেষ করে হাত-পা। ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক র‍্যান্ডি নেলসন বলেন, “শীতে হয়তো অবচেতনে মনে হতে পারে, কাউকে পেলে হাত-পা গরম থাকবে।”

শীতে অক্সিটোসিন হরমোনের চাহিদা বোধহয় একটু বেশি হয়।

পরিবারের চাপ

জাস্টিন গার্সিয়ার মতে, শীতকাল আমাদের সম্পর্ক নিয়ে ভাবার সুযোগ দেয়। পরিবার ও আত্মীয়দের মাঝে থাকলে মানুষ নিজেকে প্রশ্ন করে—আমি কাকে নিয়ে এই উৎসবগুলো কাটাতে চাই?

তিনি বলেন, “পরিবারের প্রত্যাশা আমাদের সম্পর্ক খোঁজার পেছনে বড় ভূমিকা রাখে।”

তাহলে বিজ্ঞান কতটা?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন—মানুষের সম্পর্কের আচরণ মৌসুমী নয়। এটা বেশিরভাগই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক। শীতে একা থাকা কষ্টকর লাগে, তাই সঙ্গী খোঁজা হয়।

গার্সিয়া বলেন, “যুবকরা মনে করছে, সম্পর্কে যাওয়ার আগে নিজেকে তৈরি করতে হবে।” কিন্তু সম্পর্কেই আমরা পরিপক্ক হই, ভুল থেকে শিখি।”

শীত এলে যদি মনে হয় “কাউকে দরকার”—তাহলে সেটা খুব স্বাভাবিক। মানুষ তো সামাজিক প্রাণী। একটু ঠান্ডা লাগলে কারও কাছে জড়িয়ে থাকতে কার না ভালো লাগে?