ঢাকা, ১৯ মার্চ মঙ্গলবার, ২০২৪ || ৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
৪১৭

ফাইল-নথি পড়তেই দিন কেটে যায়, ফাঁক পেলেই নাটক-সিনেমা দেখি

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:৪৫ ৮ ডিসেম্বর ২০১৯  

বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ও নাটকের ভূয়সী প্রশংসা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বললেন, আসলে এমনি তো সময় পাই না। ফাইল দেখতে দেখতে আর ওই নথি পড়তে পড়তেই দিন কেটে যায়। তবে মাঝে মাঝে টেলিভিশনে একটু একটু করে নাটক, হয়ত সব দেখতে পাই না। কিছু কিছু দেখি।

 

রোববার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি আরও বললেন, কর্মব্যস্ততার কারণে তেমন সময় না পেলেও বিদেশ সফরের যাত্রাপথে বিমানে বসে থাকার সময়ে খুঁজে খুঁজে বাংলা চলচ্চিত্র দেখেন। আর বাসায় একটু অবসর পেলে কোনো কোনো নাটকের অংশবিশেষ দেখার সুযোগ পান তিনি।

এই অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশে এখনও অনেক ভালো চলচ্চিত্র এবং জীবনস্পর্শী ও শিক্ষণীয় নাটক নির্মাণ হওয়ার কথা বলেন।

রোববার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৭ ও ২০১৮ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমি নিজে খুব বেশি সিনেমা দেখার সুযোগ না পেলেও যখন আমি বিদেশে যাই, আমি কিন্তু আমাদের বিমানে উঠলে আমি বিমানে বসে সিনেমা দেখি। আমাদের বাংলা বইগুলো খুঁজে খুঁজে আমি দেখি। এবং আমার এত ভালো লাগে এবং এত চমৎকার চমৎকার সিনেমাগুলো করা হয়! সত্যি প্রত্যেকটা বই যখনই যেটা দেখি আমার চমৎকার, খুব ভালো লাগে। খুব চমৎকার লাগে।

“সেজন্য সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমাদের যে মেধা আছে সেটা যেন আরও সুন্দর সুন্দর চলচ্চিত্র নির্মাণ হোক। সেটাই আমি চাই।”

নাটক নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আসলে এমনি তো সময় পাই না। ফাইল দেখতে দেখতে আর ওই নথি পড়তে পড়তেই দিন কেটে যায়। সেটাই হচ্ছে সমস্যা। তবে মাঝে মাঝে টেলিভিশনে একটু একটু করে নাটক, হয়ত সব দেখতে পাই না। কিছু কিছু দেখি।

“কিন্তু আমি সত্যি কথা বলতে পারি। আমি কাউকে বদনাম করতে চাই না। অন্য জায়গায় যেমন শুধু ওই শাড়ি আর গহনার কম্পিটিশন আর খুনসুটিপনা দেখি, আমাদের প্রত্যেকটা নাটকের ভেতরে এত বেশি জীবনধর্মী স্পর্শ রয়েছে, যার থেকে অনেক কিছু জানা যায়, শেখা যায়, অনেক কিছু বোঝা যায়।

“কাজেই আমি সেদিক থেকে বলব, আমাদেরগুলো সব থেকে শ্রেষ্ঠ।”

বাংলাদেশের অভিনয় শিল্পীদেরও প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।


তিনি বলেন, “আমাদের দেশের মানুষের মেধার কোনো কমতি নেই। তাদের মেধা কিন্তু অনেক বেশি। পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে আমাদের দেশের মানুষ অনেক মেধাবী। আমরা তো দেখি আমাদের এখানকার অনেক চিত্রশিল্পী আমাদের থেকে পাশের দেশে গেলে আরও ভাল কাজ করে এবং সেখানে তাদের একটা স্থান করে নিতে পারে।

“তাহলে আমরা নিজের দেশেও কেন পারব না আরো উন্নত মানের ছবি করে অন্য দেশের মানুষকে আকর্ষণ করতে? আমাদের নিজস্ব যে মেধা যে শক্তি যে মনন সেগুলো দিয়ে আমরা আমাদের মতো করে তৈরি করে আমরা বিশ্ব দরবারে নিজেদের একটা অবস্থান তৈরি করে নিতে পারি। সেদিকে আমাদের আরও বেশি দৃষ্টি দেওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।”

 

তরুণদের আরও বেশি সংস্কৃতিচর্চায় সম্পৃক্ত করতে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।  

তিনি বলেন, “এদিকে যাতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা আরও বেশি করে আসে-সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে যেন আরও মনোনিবেশ করে সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।”

তরুণদের আকর্ষণে নিজেদেরও যুগোপযোগী হতে হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমাদের তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে আসছে। তাদের যে ভাবনা, মেধা, মননশীলতা সেইগুলো আরও বিশেষ করে আমাদের কাজে লাগানো দরকার। যুগটা তো আধুনিক যুগ আর পরিবর্তনশীল যুগ। এই পরিবর্তনশীল যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। সেভাবে আমরা কাজ করতে চাই।”

এই খাতকে এগিয়ে নিয়ে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “ভালোভাবে ট্রেনিং নিতে পারে এবং নিজেদের আরও ভালোভাবে তৈরি করতে পারে- সেদিকে লক্ষ্য রেখে এই ইনস্টিটিউশন তৈরি করা হয়েছে। আমাদের তরুণ নির্মাতারা আধুনিক চলচ্চিত্র নির্মাণ কৌশল সম্পর্কে অবহিত হয়ে নিজেদের প্রতিভাকে আরও বিকশিত করতে পারবে।”

সমাজ বিনির্মাণে চলচ্চিত্রের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে এই মাধ্যম ব্যবহার করে মানুষের চিন্তা, চেতনা, মননে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।      

তিনি বলেন, “সমাজ সংস্কার বা সমাজের ভালো দিকগুলো তুলে ধরা এবং মানুষের মাঝে গভীর দাগ কাটতে পারে, মানুষকে আরও সুন্দর পথে চলার প্রেরণা দিতে পারে এই চলচ্চিত্র। কাজেই আমি মনে করি, জীবনঘনিষ্ঠ চলচ্চিত্র যত বেশি নির্মাণ করা যাবে আমাদের সমাজের জন্য সেটা ততো বেশি মঙ্গলজনক হবে।”

মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের সঙ্গে এসব বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে চলচ্চিত্রেরও ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “বর্তমান যুগে এই যে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি আমাদের সমাজকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে। শুধুমাত্র আইনগত অভিযান দিয়েই কিন্তু সমাজকে এর থেকে রক্ষা করা যাবে না। এর জন্য দরকার মানুষের ভেতরের চেতনাটাকে আরও উদ্ভাসিত করা। এর খারাপ দিকটা তুলে ধরা আর ভালো থাকলে সেই ভালো দিকটা মানুষের সামনে উপস্থাপন করা।

“চলচ্চিত্র এখানে বিরাট একটা ভূমিকা রাখতে পারে। কাজেই সেদিকে আপনারা আরও বেশি নজর দেবেন, সেটাই আমরা চাই। কারণ প্রত্যেকটা ঘটনা বা কাহিনী যখন তৈরি হবে সেটা যেন জীবনভিত্তিক হয়। জীবনের বৈচিত্র্য যেন তুলে ধরে। মানুষের ভেতর যেন ভালো মননগুলো সেগুলো যেন বিকশিত হতে পারে‌। সেদিকে বিশেষভাবে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।”

শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়নে জাতির জনকের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “জাতির পিতাকে হত্যার পর আমরা শুধু আর্থ-সামাজিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি তা না। আমাদের ইতিহাস যেমন বিকৃত করা হয়েছিল আবার আমাদের সাংস্কৃতিক জগতেও অপসংস্কৃতির প্রচলনটা খুব বেশি দেখতে পেলাম। এমনকি এমন এক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল যে পরিবার-পরিজন, ছেলে-মেয়ে নিয়ে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখার পরিবেশটা ছিল না। যা সমাজের ওপর একটা বিরাট আঘাত হয়ে এসেছিল।”

ধীরে ধীরে সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য চলচ্চিত্র শিল্পী, কলাকুশলীদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হল চালু করতে হল মালিকদের সাথে আলোচনার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আসলে আমাদের যেটা করতে হবে এখন সমস্ত জেলা, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত মানুষের কিন্তু আস্তে আস্তে ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়ছে। কিন্তু একটা বিনোদনের ব্যবস্থা যাতে ভালোভাবে হয় সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

“আমাদের মফস্বলের সিনেমা হলগুলো যেন ভালোভাবে চলতে পারে এবং ডিজিটালাইজড যাতে হয়, সেদিকেও আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে অর্থাৎ আধুনিক যুগের সাথে যেন তাল মিলিয়ে তারা চলতে পারে। এই ক্ষেত্রে যা যা সহযোগিতা দরকার সেটা আমরা করতে পারব।”

অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

বিনোদন বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর