ঢাকা, ২৪ এপ্রিল বুধবার, ২০২৪ || ১১ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৫৪১

হোলি আর্টিজান হামলা নিয়ে সিনেমা, অবিন্তার পরিবারের না

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:২৯ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

২০১৬ সালে ঢাকার হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত বাংলাদেশিদের একজন অবিন্তা কবির। তার পরিবার উকিল নোটিশ দিয়ে বলছে, হোলি আর্টিজানের ঘটনা নিয়ে কেউ কোনও চলচ্চিত্র কিংবা ওইরকম কিছু তৈরি করলে, সেখানে এমন কোনও চরিত্র রাখা যাবে না, যা অবিন্তার সঙ্গে মিলে যায়।

ওই বছরের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় দুই পুলিশ সদস্যসহ ২২ জন নিহত হন। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ এ সন্ত্রাসী হামলা নিয়ন্ত্রণে আনতে শেষ পর্যন্ত সৈন্যদের কমান্ডো অভিযান চালানো হয়। এতে নিহত হন ৫ জঙ্গি।

বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তৈরি করা ওই ঘটনায় জঙ্গিরা ওই রাতে ২০ জনকে হত্যা করে। তন্মধ্যে ৯ জন ইতালি, ৭ জন জাপানি, ৩ জন বাংলাদেশি এবং ১ জন ভারতীয় নাগরিক। এদের মধ্যে অবিন্তা ছিলেন বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। এখন তার পরিবার 'অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন' নামে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছে।

সেই ফাউন্ডেশন বলছে, হোলি আর্টিজান বেকারিতে সংঘটিত ঘটনা নিয়ে কেউ যদি কোনো নাটক, সিনেমা, টেলিফিল্ম, গল্প উপন্যাস বানাতে চান, তা হলে তাতে এমন কিছু রাখা যাবে না যা অবিন্তার চরিত্রের সঙ্গে মিলে যায়। এছাড়া এমন কোনো চরিত্র করা যাবে না, যাতে করে সেটি তিনি মনে হতে পারেন।

এ নিয়ে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আইনজীবীদের মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে গণমাধ্যমে। তাতে বলা হয়েছে, হোলি আর্টিজানকে কেন্দ্র করে কোনোরূপ মিডিয়া নির্মাণের মাধ্যমে সেসব ঘটনা আবার জনগণের মাঝে প্রচার করলে, তা কেবল সেই দুর্ঘটনার করুণ এবং কষ্টদায়ক স্মৃতিগুলোই আবার জাগিয়ে তুলবে; যা অবিন্তার মা ও তার পরিবার প্রতিনিয়ত ভুলে থাকার সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।

আইনজীবী ওমর এইচ খান ও মিতি সানজানা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থকে এ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছেন, অবিন্তার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সাদৃশ্য রয়েছে এমন কিছু তুলে ধরলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মিতি সানজানা বলছেন, বাংলাদেশ ও ভারতে একটি পাবলিক ও কিছু লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছি আমরা। প্রতিবেশি দেশের কয়েকটি সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান আলাদাভাবে এবং বাংলাদেশের কিছু সংগঠন মিলে যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে হোলি আর্টিজান নিয়ে সিনেমা বা মোশন পিকচার নির্মাণের।

তিনি বলেন, ভারতে ভিভেশ প্রোডাকশনস ও তিত্তার লজ প্রোডাকশনস এমন উদ্যোগ নিয়েছিল। ভিভেশের হয়ে মহেশ ভাট এসেছিলেন এবং এক ভিকটিম ফ্যামিলির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তার স্কুলসহ নানা জায়গায় গিয়েছেন। তাদের উভয়কেই জানানো হয়েছে অবিন্তার পরিবারের অবস্থান। তারা শেষ পর্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করে তাদের উদ্যোগ স্থগিত করেছেন।

মিতি বলছেন, বাংলাদেশেও তিনটি প্রতিষ্ঠান যৌথ উদ্যোগে চলচ্চিত্র তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। তাদেরও আমরা আইনি নোটিশ পাঠিয়েছি। তবে ওদের দিক থেকে এখনো কোনো জবাব বা সিদ্ধান্ত পাইনি। এছাড়া কলকাতাতেও একজন এমন উদ্যোগ নিয়েছেন, সেখানেও নোটিশ দেয়া হয়েছে।

অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশনের এ আইনজীবী বলছেন, মনে রাখতে হবে, যে ঘটনা অনেকের কাছে ভালো গল্প বা সিনেমার প্লট; সেটিই আবার কারও জীবনে অবর্ণনীয় কষ্টের ঘটনা। অবিন্তার পরিবারের অবস্থান হলো অনুমতি ছাড়া তার চরিত্র তুলে ধরা যাবে না কিংবা এমন কোনো চরিত্র রাখা যাবে না, যেটি তিনি মনে হতে পারে।

বিশ্বজুড়ে আলোচিত বহু ঘটনা নিয়ে অনেক নাটক, সিনেমা, উপন্যাস যেমন হয়েছে; তেমন আরও অনেক মাধ্যমে নানাভাবে এসব উঠেও এসেছে। এক্ষেত্রে হোলি আর্টিজান বেকারির ভয়াবহ ঘটনা নিয়ে কেউ যদি নাটক, সিনেমা বানাতে চান, তা হলে এ ধরনের আইনি নোটিশ দিলে উদ্যোক্তাদের জন্য আইনে সেটি মানতে কোনো বাধ্যবাধকতা আছে কি?

এমন প্রশ্নের জবাবে মিতি সানজানা বলেন, মনে রাখতে হবে বিষয়টি এখনো উচ্চ আদালতে বিচারাধীন আছে। এর সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তির বিষয় জড়িত আছে। আর উনারা (সিনেমা উদ্যোক্তারা) তো ব্যবসা করবে। তারা ছবি নির্মাণ করতে পারেন অনেক বিষয়েই। কিন্তু সংবিধানে রাইট টু প্রাইভেসি আছে। এমনভাবে ফ্রিডম চর্চা করতে পারব না, যেটা অন্যের অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে। হোলি আর্টিজানে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, সেটা অত্যন্ত জঘন্য ও নিষ্ঠুর। এখন এগুলো নিয়ে মুভি হলে শোরগোল হবে যা অবিন্তার পরিবার চান না।

তিনি বলেন, নরওয়ে সামার ক্যাম্পে ৭৩ বাচ্চাকে হত্যার ঘটনা নিয়ে মুভি হয়েছে। এখানেও হতে পারে। তবে যাদের চরিত্র তুলে ধরা হবে, তাদের পরিবারের অনুমতি লাগবে অবশ্যই। কেউ যদি অনুমতি না দেয়, তা হলে তাকে এর বাইরে রাখতে হবে।

অবশ্য আইনজীবী ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া বলছেন, সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই এ বিষয়ে। তবে সংসদে পাস হওয়া আইন না থাকলেও অনেক সময় প্রচলিত প্রথা, অন্য দেশের বিধান, আদালতের আদেশের নজির এসব বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়। রাইট টু প্রাইভেসি -সবার সাংবিধানিক অধিকার। কারণ, একজন মানুষ অলরেডি সাফারার। এখন তাকে নিয়ে কোনো কিছুতে তিনি আপত্তি করলে তার অনুমতি নেয়ার বিষয় আছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে নজির না থাকলেও অন্য দেশে এমন বিষয় আদালতে এসেছে। এ ধরনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়ার নজির আছে। নজির, প্রথা এগুলো বিবেচনা করতে পারে আদালত। তবে চূড়ান্তভাবে নির্ভর করবে আদালত কিভাবে বিষয়গুলো দেখছেন সেটার ওপর।

বিনোদন বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর