ঢাকা, ২০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৫ || ৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২
good-food

ক্লাউডফ্লেয়ার আসলে কী?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:৩৩ ১৯ নভেম্বর ২০২৫  

মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স ও চ্যাটজিপিটিসহ বিশ্বের বহু জনপ্রিয় ওয়েবসাইট বিকল হয়ে পড়েছিলো আচমকাই। ইন্টারনেট অবকাঠামো নিয়ন্ত্রণকারী শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ক্লাউডফ্লেয়ারের নেটওয়ার্কে বড় ধরনের সমস্যা হবার কারণেই এই বিপর্যয় এর মুখে পড়ে বৈশ্বিক ইন্টারনেট সেবা।

হাজার হাজার ব্যবহারকারী এই ওয়েবসাইটগুলো ছাড়াও আরও অনেক পরিষেবা নিয়ে ইন্টারনেট বিভ্রাট পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ‘ডাউনডিটেক্ট’ এ অভিযোগ জানাতে শুরু করেন।

ক্লাউডফ্লেয়ার জানিয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ ইন্টারনেট ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য তৈরি একটি কনফিগারেশন ফাইল ঠিকমতো কাজ না করায় তাদের সফটওয়্যারে ‘ক্র্যাশ’ করে। এরপরেই এই সমস্যার সম্মুখীন হয় বিশ্ববাসী।

ইন্টারনেট পরিসেবা পুনরায় ঠিক হওয়ার পর আজ এক বিবৃতিতে এই সমস্যার জন্য ক্ষমা চেয়েছে ‘ক্লাউডফেয়ার’। বিবৃতিতে তারা জানায়, ‘‘আপনাদের হতাশ করার জন্য আমরা আমাদের গ্রাহক এবং পুরো ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে ক্ষমা চাইছি।’’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘‘ক্লাউডফ্লেয়ারের পরিষেবার গুরুত্ব বিবেচনা করলে, যেকোনো ধরনের বিভ্রাটই অগ্রহণযোগ্য। যদিও সমস্যাটির সমাধান করা হয়েছে, তবুও কিছু পরিষেবা পুরোপুরি অনলাইনে ফিরে আসার সময় সাময়িক ত্রুটির সম্মুখীন হতে পারে।’’

এই বিভ্রাটের কারণে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট বন্ধ হয়। গ্রাইন্ডার, জুম এবং ক্যানভার মতো পরিষেবা ব্যবহার করার সময় ব্যবহারকারীরা বিলম্ব বা প্রযুক্তিগত সমস্যার কথা জানান।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার) এর হোমপেজে কিছু ব্যবহারকারী একটি বার্তা দেখতে পান, যেখানে বলা হয় ক্লাউডফ্লেয়ারের ত্রুটির কারণে তাদের অভ্যন্তরীণ সার্ভারে সমস্যা হচ্ছে।


একইভাবে, চ্যাটজিপিটি-র সাইটেও একটি ত্রুটির বার্তা দেখানো হচ্ছিল, যেখানে লেখা ছিল: 'এগিয়ে যেতে দয়া করে চ্যালেঞ্জেস ডট ক্লাউডফ্লেয়ার ডট কম আনব্লক করুন।'

ক্লাউডফ্লেয়ার আসলে কী?

ক্লাউডফ্লেয়ার হলো বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট নিরাপত্তা প্রদানকারী একটি বিশাল প্রতিষ্ঠান। তাদের অন্যতম প্রধান কাজ হলো, কোনো ওয়েবসাইটে মানুষ প্রবেশ করছে নাকি স্বয়ংক্রিয় বট, তা পরীক্ষা করার মতো সেবা দেওয়া।

প্রতিষ্ঠানটির দাবি, বিশ্বের প্রায় ২০% ওয়েবসাইট কোনো না কোনোভাবে তাদের পরিষেবা ব্যবহার করে।

বিভ্রাটের ব্যাপকতা এতটাই ছিল যে, ডাউনডিটেক্টর ওয়েবসাইটটি নিজেই একটি ত্রুটির বার্তা দেখাচ্ছিল। কারণ, অন্য ওয়েবসাইট ডাউন হলে মানুষ সাধারণত এই সাইটেই ভিড় জমায়, আর সেদিন এটিও বিভ্রাটের শিকার হয়।

ক্লাউডফ্লেয়ার জোর দিয়ে বলেছে যে, সমস্যাটি একটি প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণেই ঘটেছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, ''পরিষ্কার করে বলছি, এটি কোনো হামলার ফল বা ক্ষতিকর কার্যকলাপের কারণে ঘটেছে, এমন কোনো প্রমাণ নেই।''

জিএমটি সময় বিকেল ৩টার দিকে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম প্রায় ৩% কমে যায়।

গত মাসে অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস-এ একটি বিভ্রাটের কারণে ১,০০০-এরও বেশি সাইট এবং অ্যাপ অফলাইন হয়ে গিয়েছিল। এর কিছুদিন পরেই আরেক বড় পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট অ্যাজুর-ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

ইসেট-এর গ্লোবাল সাইবারসিকিউরিটি উপদেষ্টা জেক মুর বলেন, ''গত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া এই বিভ্রাটগুলো আবারও প্রমাণ করেছে যে আমরা এই ভঙ্গুর নেটওয়ার্কগুলোর ওপর কতটা নির্ভরশীল।''


তিনি আরও বলেন, 'অন্য কোনো ভালো বিকল্প না থাকায় কোম্পানিগুলো প্রায়ই তাদের ওয়েবসাইট ও পরিষেবা হোস্ট করার জন্য ক্লাউডফ্লেয়ার, মাইক্রোসফট এবং অ্যামাজনের মতো প্রতিষ্ঠানের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করতে বাধ্য হয়।'