ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ৭ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
২৪২

দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৭:১৮ ৭ নভেম্বর ২০১৯  

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে তোলা দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। বললেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে অসুস্থ, অস্বচ্ছল ও  দু্র্ঘটনায় হতাহত সাংবাদিকদের পরিবারকে আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে এই কথা বলেন।
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে উপাচার্য ফারজানা ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে গেল কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলেও সেখানে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।
জাবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাদের প্রমাণ করতে হবে। যদি কেউ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় … প্রত্যেকে যারা অভিযোগ নিয়ে আসছে, যারা বক্তৃতা দিচ্ছে … আমি বলেছি সমস্ত ফুটেজ সংরক্ষণ করতে হবে।
“যদি দুর্নীতি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে দুর্নীতি করলে যে শাস্তি, যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে তার যে শাস্তি হত, যে অভিযোগকারী সে যদি ব্যর্থ হয় প্রমাণ করতে, তাকে কিন্তু সেই সাজা পেতে হবে। এটা কিন্তু আইনে আছে। মিথ্যা অভিযোগ করলে তার বিরুদ্ধে কিন্তু আইন ব্যবস্থা নেবে। সেই ব্যবস্থা কিন্তু আমরা নেব। আপনাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিলাম।”

তিনি আরও বলেন, প্রমাণ করতে হবে ওই টাকা নিয়ে কোথায় রাখল, না কি করলে, খুঁজে বের করতে হবে। মুখে বললে তো হবে না। সুনির্দষ্টভাবে সে জানে বলেই তো অভিযোগ করেছে। সুনির্দিষ্টভাবে যখন জানে তখন সে অভিযোগটা বলবে না কেন বা প্রমাণ দেবে না কেন? আর প্রমাণ যদি না দিতে পারে তাহলে যে মিথ্যা অভিযোগ করবে তার শাস্তি হবে। সেটা আপনাদের জানিয়ে দিয়ে যাচ্ছি। আমরা কিন্তু এটা করব।
দিনের পর দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা বরদাশত করা হবে না বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়নকাজ শুরু হলেই আন্দোলন কেন এমন প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব থেকে যেটা লক্ষ্যনীয়, যখন উন্নয়নের কোনো কাজ দেয়া হয়, যখনই সেখানে একটা প্রজেক্ট দেয়া হয়, তখনই এই আন্দোলন যেন আরও ঘনীভূত হয়ে ওঠে। কেন? তাহলে যারা আন্দোলন করেন তাদেরও ভাগ-বাটোয়ারার ব্যাপার আছে, নাকি ভাগে কম পড়ছে, আমার প্রশ্ন সেখানেও আছে।
“আমি জানি আমি খুব রূঢ় হচ্ছি কিন্তু বাস্তবে আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে, এটা কি ধরনের কথা? হয়ত প্রজেক্ট পাস হয়ে গেছে টাকাও ছাড় হয়নি। তার আগেই দুর্নীতির অভিযোগে আন্দোলন, কি কারণে? কার ভাগে কম পড়ল যে এই আন্দোলন?”

আন্দোলনে থাকা শিক্ষকদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এভাবে ছেলে মেয়েদের জীবন নষ্ট করার কি অধিকার আছে? শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলছে..যদি অভিযোগ থাকে বলুক আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। কিন্তু যেখানে আমরা একজনকে ভিসি বানালাম তার বিরুদ্ধে আন্দোলন। আর এর মধ্যে শিক্ষকও জড়িত। শিক্ষকরা ছাত্রদের ব্যবহার করে। এটা কোন ধরনের কথা?
“এখানে কি কোনো ডিসিপ্নিন থাকবে না? কোনো আইন থাকবে না? আইন প্রয়োগ হবে না? আর আমাদের কিছু কিছু আছে ... এটাকে আরও উস্কানি দেয়। এই বিষয়গুলো মনে হয় একটু দেখা দরকার আপনাদের।”
তিনি বলেন, আমি হঠাৎ দেখছি কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে কথা নাই বার্তা নাই ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলন। ভিসিকে দু্নীতিবাজ বলছে। আমার স্পষ্ট কথা, যারা দু্নীতির অভিযোগ আনছে তাদেরকে কিন্তু এই অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে এবং তাদেরকে তথ্য দিতে হবে। তারা যদি তথ্য দিতে পারে নিশ্চয়ই আমরা ব্যবস্থা নেব।
“কিন্তু তারা সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারবে না। ওই দুর্নীতি দুর্নীতি করে ক্লাসের সময় নষ্ট করবে। ক্লাস চলতে দেবে না, ইউনিভার্সিটি চলতে দেবে না।আন্দোলনের নামে ভিসির বাড়িতে আক্রমণ, অফিসে আক্রমণ, ভাংচুর ... নানা ধরনের। এটাও তো এক ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।”

ছাত্র-শিক্ষকরা এই ধরনের কর্মকাণ্ড কেন ঘটাবে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, তারা ক্লাস কেন বন্ধ করবে? প্রত্যেকটা পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে কয় টাকা তারা খরচ করে তাদের পড়ার জন্য? খরচ তো সরকারের পক্ষ থেকে করি। স্বায়ত্ত্বশাসন তাদের আছে। স্বায়ত্ত্বশাসিত হলে তো তাদের নিজেদের অর্থের জোগান দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানোর কথা। কিন্তু প্রতি বছর বাজেটে আমরা টাকা দেই। বাজেটে আমরা টাকা দেব আর সরকার সেখানে কিছুই করতে পারবে না, আর এভাবে দিনের পর দিন তারা ক্লাস বন্ধ করে থাকবে এটা হয় না।
আবরার ফাহাদ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের পরও বুয়েটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়েও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বুয়েটের সমস্যাটা কি সেটা তো বুঝতে পারছি না। আমরা তো সবই করলাম। তারপরও এই আন্দোলন কিসের জন্য? বুয়েটে যে আবরার হত্যা ঘটল, আমরা সাথে সাথে তার ব্যবস্থা নিয়েছি। সকলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছাত্ররা আন্দোলনের আগেই যখনই খবর এসেছে তখনই কিন্তু আমরা অ্যাকশন নিয়েছি। এখন তাহলে আন্দোলন কিসের জন্য, আমার সেটাই প্রশ্ন।
“দিনের পর দিন ক্লাস করতে দেবে না, নিজেরা ক্লাস করবে না। তাহলে তারা ইউনিভার্সিটিতে থাকবে কেন? এই ধরনের কাজ যারা করবে সাথে সাথে তাদের এক্সপেল করে দেয়া উচিত। তারা কিসের জন্য এভাবে করবে?”

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সরকার গঠনের পর থেকে অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি। আজকে এতগুলো টিভি চ্যানেল, আগে একটিমাত্র টিভি চ্যানেল ছিল। এতগুলো চ্যানেলের ফলে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। আজকে প্রায় ৪৪টি চ্যানেল অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ২৪টি চ্যানেল ইতোমধ্যে চলছে। সেখানে কত কর্মসংস্থান, কাজর ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। আবার সেখানে মধ্য রাতে টক শো চলে। সেখানে অনেক কথা বলার পরেও তারা বলে কথা বলার অধিকার নেই। 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তথ্য অধিকার আইন করে তথ্য কমিশন গঠন করেছি। সেখানে যে কেউ যেকোনো তথ্য পেতে পারে। এই সুযোগ কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারই দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার যত বেশি সুযোগ দেয় তত বেশি সমালোচনার শিকার হয়। আগে কথাও বলতে পারতো না, সমালোচনা করতেও পারত না।
তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ আর্থসামাজিকভাবে উন্নতি করেছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে, সব দিক থেকে দেশের উন্নতি হয়েছে, তাহেল অভিযোগটা কী? আমারা তো কাজ করে যাচ্ছি। আমরা মেট্রোরেলের কাজ করছি, এখানে স্টেশন হতে পারবে না, ওখানে হতে পারবে না। যাদের সুবিধার জন্য তারাই সেখানে আন্দোলন করে স্টেশন হতে দেবে না।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আধুনিক প্রযুক্তিতে কাজ করতে হলে তো কতগুলো নিয়ম মানতেই হবে। তাদের অসুবিধাটা কোথায়? তারা ট্রেন থেকে নেমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে চলে যাবে। আর তারাই যদি বাধা দেয়ার চেষ্টা করে তাহলে ডেভলেপমেন্টটা হবে কীভাবে?
শেখ হাসিনা বলেন, রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুলে যে ঘটনাটা ঘটলো, যারা অনুষ্ঠান করে তাদের তো একটা দায়িত্ববোধ থাকে। যারা স্কুলের মাঠে অনুষ্ঠান করছে তাদের ওই বাচ্চাদের সেফটি সিকিউরিটির দিকে দেখা উচিত ছিল। তারা এতটাই নেগলেট করেছে যে ইলেকট্রিক কারণে মারা গেছে বাচ্চাটা। ধানমন্ডির ওই এলাকায় কতগুলো হাসপাতাল, কিন্তু সেগুলোতে না নিয়ে মহাখালীর একটি হাসপাতালে নিয়ে গেছে। ইলেকট্রিকের ওই বিষয়গুলোর দিকে তারা দৃষ্টিই দেয়নি। এত অবহেলা কীভাবে করতে পারে? তারা অনুষ্ঠান করেছেন, তাদের কি কোনো দায়বদ্ধতা নেই? এটি তাদের একটি গর্হিত অপরাধ। এভাবে একটা বাচ্চা মারা যাবে, এটা তো বরদাশত করা যায় না।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ,  প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এবং তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু,  তথ্য সচিব আবদুল মালেক,  প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. নজিবুর রহমান,  সচিব সাজ্জাদুল হাসান,  প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ এবং প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম,  বাংলাদেশ অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান, পিআইবি’র মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ,  বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল এবং সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি আবু জাফর সূর্য এবং সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, বিটিভি’র মহাপরিচালক এসএম হারুনুর রশিদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর