ঢাকা, ১৯ মার্চ মঙ্গলবার, ২০২৪ || ৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
৯২১

ইজতেমার আখেরি মোনাজাত মঙ্গলবার

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:০৫ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

 দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার  সকাল ১০টায়। যা আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার  বেলা ১১টার মধ্যে হওয়ার কথা ছিল।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে এই পর্বের ইজতেমার সময় একদিন বাড়ানো হয়েছে বলে গাজীপুর জেলা প্রশাসন নিশ্চিত করেছে।

 

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবির সাংবাদিকদের বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে মাওলানা সাদ কান্ধলভী পক্ষের স্থানীয় মুরুব্বিরা সরকারের কাছে একদিন সময় বেশি চেয়ে আবেদন করেছেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এক দিন বাড়ানো হয়েছে। তাই ১৯ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকাল ১০টায় আখেরি মোনাজাত হবে।

 

এর আগে গত শনিবার প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় মাওলানা জোবায়ের অনুসারীদের আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, দমকা হাওয়া ও ঠাণ্ডা-স্যাতসেতে আবহাওয়ার মধ্যেই রোববার ভোরে শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। ফজর নামাজের পর তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বি ভারতের মাওলানা ইকবাল হাফিজের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের দুদিনের এ ইজতেমা শুরু হয়। বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা আবদুল্লাহ মুনসুর। কাল সোমবার আখেরি মোনাজাতে শেষ হবে তুরাগ তীরে তাবলিগ জামায়াতের সবচেয়ে বড় এ জমায়েত।

 

ভোর থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ায় ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। শামিয়ানা চটের হওয়ায় অনেকেরই মালপত্র ও বিছানা ভিজে যায়। অনেককেই মালামাল পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে দেখা গেছে।

 

কেউ কেউ চটের শামিয়ানার নিচে পলিথিন টানিয়ে বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করেন। বিশেষ করে ইজতেমায় আগত বয়স্ক মুসল্লিরা বৃষ্টির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েন।

 

বৃষ্টি হওয়ায় শীতও বেড়েছে। প্রচণ্ড শীতের মধ্যে মুসল্লিদের জবুথবু হয়ে বসে জিকির আজগার করতে দেখা গেছে।

 

ইজতেমায় আসা মুসল্লিরা সাধারণত ইজতেমা ময়দানের উন্মুক্ত স্থানে রান্নাবান্না করে থাকেন। বৃষ্টির কারণে তাদের রান্না করাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

 

শনিবার সন্ধ্যায় মাওলানা জোবায়ের অনুসারীরা ইজতেমা ময়দান ত্যাগ করার পর ধীরে ধীরে ময়দানে প্রবেশ করতে থাকেন মাওলানা সাদ অনুসারী মুসল্লিরা। মুসল্লিদের মাঠে প্রবেশের এ ঢল আজও অব্যাহত রয়েছে।

 

গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর জানান, ইজতেমা সমাপ্তির পর ইজতেমার সব মালামাল প্রশাসনের হেফাজতে থাকবে। পরে উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মুসল্লিদের সার্বিক বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন খোঁজখবর রাখছে বলেও জানান তিনি।

 

এর আগে শনিবার দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে শুরু হওয়া মোনাজাতে কয়েক লাখ মুসল্লি অংশ নেন। ১১টা ৬ মিনিটে শেষ হয় প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত।

 

মোনাজাত পরিচালনা করেন কাকরাইল মসজিদের খতিব ও তাবলিগ জামাতের শূরা সদস্য হাফেজ মাওলানা জোবায়ের।

 

ভারতের মাওলানা সাদ আহমেদ কান্ধলভীকে নিয়ে তাবলিগের দু-পক্ষের বিরোধের মধ্যেই এবার একসঙ্গে আয়োজন করা হচ্ছে ইজতেমা।

 

টঙ্গীর তুরাগ তীরে ১৬০ একর বিস্তৃত বিশ্ব ইজতেমা ময়দান প্রায় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা অবস্থান নিয়েছেন তাদের নির্ধারিত তাঁবুর নিচে। তারা জিগির-আজগার এবং আল্লাহর ইবাদতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এসব মিলিয়েই টঙ্গীর তুরাগ তীরে যেন মুসল্লিদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। বৃদ্ধ, যুবক, কিশোর ও তরুণসহ সব বয়সের মুসল্লিরা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে এবং টুপি মাথায় ইসলামের এ মেলায় শরিক হয়েছেন।

 

বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও বিআরটিসি মুসল্লিদের আনা-নেয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইজতেমা মাঠের সংস্কারকাজ এবং সেবামূলক কার্যক্রম নিশ্চিত করেছে। বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য ইজতেমা মাঠে পাঁচটি কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে।

 

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, গাজীপুর জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র‌্যাব, আনসার ও ভিডিপির কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশ প্রশাসনের ১৫টি ওয়াচ টাওয়ার, র‌্যাবের ১০টি ওয়াচ টাওয়ার, মুসল্লিদের জন্য ৩৫০টি অস্থায়ী শৌচাগার, অজু, গোসল, পয়ঃনিষ্কাশন ও সুপেয় পানি সরবরাহের লক্ষ্যে ১৩টি গভীর নলকূপ থেকে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতিদিন তিন কোটি ৫৪ লাখ গ্যালন সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে আকাশ ও নৌপথে পুলিশ, র‌্যাবের নিয়মিত টহল। নিরাপত্তা চাঁদরে ঘিরে ফেলা হয়েছে পুরো শিল্পনগরী।

গেল জানুয়ারিতে ইজতেমা মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয়। সংঘর্ষের পর ইজতেমা অনুষ্ঠান স্থগিত হয়ে যায়। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় দুই মুসল্লি নিহত ও পাঁচ শতাধিক মুসল্লি আহত হন। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আগ্রহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে দুপক্ষকে একসঙ্গে এনে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের কার্যক্রম শুরু হয়।

 ১৯৬৭ সাল থেকে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা হয়ে আসছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সমাগম ঘটে ইজতেমায়।