ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
৪৩৩

বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ৮ নভেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৬:০৫ ২৬ অক্টোবর ২০২০  

সর্বকালে সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত বিশেষ অধিবেশনে বসতে যাচ্ছে জাতীয় সংসদ।

 

বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় সংসদের দুটি বিশেষ বৈঠক বসলেও এটাই হবে প্রথম বিশেষ অধিবেশন; সেখানে সংসদ কক্ষে থাকবে জাতির জনকের প্রতিকৃতি।

 

আসছে ৮ নভেম্বর এই অধিবেশন আহ্বান করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। ওই সন্ধ্যা ৬টায় বসবে সংসদের বৈঠক।

 

অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতি যে স্মারক বক্তৃতা দেবেন, এরইমধ্যে মন্ত্রিসভা তা অনুমোদন করেছে। 

 

বঙ্গবন্ধুর সহচর জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, “এটাই হবে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের প্রথম বিশেষ অধিবেশন। আমরা সংসদ সদস্যরা জাতির জনকের জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা করব। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবন, তার আদর্শসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।”

 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী সাড়ম্বরে উদযাপনে এ বছরকে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করে নানা কর্মসূচি নেয় সরকার। তার অংশ হিসেবে গত ৯ জানুয়ারি সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এই বিশেষ অধিবেশন করার সিদ্ধান্ত হয়।

 

কথা ছিল, ২২-২৩ মার্চ এই বিশেষ অধিবেশন হবে। অধিবেশনের শুরুতেই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ভাষণ দেবেন। এরপর বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন নিয়ে একটি প্রস্তাব পাস হবে।

 

কিন্তু বিশ্বের অন্য সব দেশের মত বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকলে মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কাটছাঁট করা হয়, সংসদের বিশেষ অধিবেশনও স্থগিত হয়ে যায়।

 

শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমে কমতে শুরু করায় সেই বিশেষ অধিবেশন বসানোর আলোচনা শুরু হয় গত সেপ্টেম্বর মাসে। সে সময় প্রস্তুতিমূলক বৈঠকও করে সংসদ সচিবালয়।

 

এর আগে ১৯৭৪ সালের ৩১ জানুয়ারি ও ১৮ জুন সংসদে যে বিশেষ বৈঠক বসেছিল, সেখানে যুগোস্লাভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি বরাহগিরি ভেঙ্কট গিরি ভাষণ দিয়েছিলেন।

 

এবার মার্চে যে বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছিল, সেখানে প্রতিবেশী দেশগুলোর স্পিকারদের আমন্ত্রণ জানানোর কথা ছিল; কিন্তু তখন তা স্থগিত হয়।


এবার নতুন করে উদ্যোগ নেওয়ার পরও বিষয়টি আলোচনায় আসে; তবে মহামারী পরিস্থিতির কারণে তা আর এগোয়নি।  

 

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, “স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল সুরক্ষা নিয়ে আমরা অধিবেশন আয়োজন করব। একাদশ জাতীয় সংসদ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ পালন করতে যাচ্ছে। এটা এই সংসদের জন্য গর্বের বিষয়।”

 

মুজিববর্ষ উপলক্ষে ১০টি কর্মসূচি নিয়েছে জাতীয় সংসদ। এরমধ্যে এখন বৃক্ষ রোপণ চলছে। নভেম্বরে মুজিববর্ষের ওয়েবসাইট উদ্বোধন, স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন, ৪ নভেম্বর সংবিধান দিবস উদযাপন, মাসব্যাপী আলোকচিত্র ও প্রামাণ্য দলিল প্রদশর্নী, ‘সংসদে বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে একটি বইয়ের প্রকাশনা এবং শিশুমেলাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে।

 

সংসদ কক্ষে স্পিকার যেখানে বসেন, তার পেছনে উপযুক্ত জায়গায় জাতির জনকের প্রতিকৃতি মর্যাদার সাথে প্রদর্শন ও সংরক্ষণ করার আদেশ দিয়েছেন হাই কোর্ট।

 

গত অগাস্ট মাসে হাই কোর্টের দেওয়া ওই আদেশের কপি পাওয়ার পরপরই অধিবেশন কক্ষে ছবি টাঙিয়েছে সংসদ কর্তৃপক্ষ।

 

স্পিকার বলেন, “আদালতের আদেশে আমরা ছবি টাঙিয়েছি। এর মধ্যে সংসদের অধিবেশন হয়নি। আসন্ন বিশেষ অধিবেশনই হবে প্রথম অধিবেশন, যেখানে সংসদ কক্ষে বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকবে।”

 

করোনাভাইরাস মহামারীর বিস্তারের পর এখন পর্যন্ত তিনটি অধিবেশনে বসেছে সংসদ। এর মধ্যে গেল এপ্রিল মাসে বসে দেড় ঘণ্টার নিয়ম রক্ষার অধিবেশন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সংক্ষিপ্ততম। এরপর গত জুনে অষ্টম (বাজেট) এবং সেপ্টেম্বরে নবম অধিবেশন বসে।

 

সংক্রমণ রোধে শেষ দুটি অধিবেশন বসেছে সীমিত সংখ্যক সদস্যকে নিয়ে, যাতে অন্তত কোরাম হয়। তালিকা করে, দিন নির্দিষ্ট করে আইন প্রণেতাদের সংসদে নেওয়া হয়।

 

তার আগে সবার করোনাভাইরাস পরীক্ষা হয়েছে। বয়স্ক সংসদ সদস্যদের অধিবেশনে যেতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া হয়েছে সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারিদেরও।

 

তবে বিশেষ অধিবেশনের প্রথম বৈঠকে সবাইকে থাকার কথা বলা হবে জানিয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, সেক্ষেত্রেও সবার কোভিড-১৯ পরীক্ষা করাতে হবে।

 

“আগামী ৩ নভেম্বর থেকে সংসদ সদস্যদের পরীক্ষা শুরু হবে। প্রথমদিন কোভিড-১৯ নেগেটিভ সকল মাননীয় সংসদ সদস্য অধিবেশনে অংশ নেবেন। এরপর থেকে আমরা আগের মত তালিকা করে অধিবেশন চালাব।”

 

সংসদ সচিবালয় কর্মকর্তারা জানান, মহামারীকালের অন্য তিনটি অধিবেশনের মত এ অধিবেশনেও সংবাদকর্মীদের প্রবেশাধিকার থাকছে না। সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রবেশও সীমিত থাকবে।