ঢাকা, ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১০ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৭১১

চলাচলে কড়াকড়ি

৩০মে পর্যন্ত ছুটি : গণপরিবহন-বিমান বন্ধ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৬:৩২ ১৪ মে ২০২০  

কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে চলমান সাধারণ ছুটি আরও ১৪ দিন বাড়ানো হয়েছে। সাধারণ ছুটি ৩০ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে আদেশ জারি করেছে সরকার। 


বৃহস্পতিবার (১৪ মে) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সপ্তম দফায় ছুটি বাড়িয়ে আদেশ জারি করা হয়। এ ছুটির মধ্যে শবে কদর ও ঈদের ছুটিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

 

ছুটি বাড়ানোর প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কারোনাভাইরাস বিস্তার রোধে সরকার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ১৬ মে’র পর শর্তসাপেক্ষে ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ১৭ থেকে ২৮ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি থাকবে।

 

সাধারণ ছুটির সঙ্গে ২১ মে’র শবে কদরের ছুটি, ২২, ২৩, ২৯ ও ৩০ মে’র সাপ্তাহিক ছুটি এবং ২৪, ২৫ ও ২৬ মে’র ঈদের ছুটি যুক্ত হবে।

 

সাধারণ ছুটির মেয়াদ আবার বাড়ানো হতে পারে বলে কয়েক দিন ধরেই আলোচনা চলছিল। এবার আসলো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।


এর আগে বুধবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছিলেন, ছুটি ১৭ মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত বাড়বে। ঈদের ছুটিও এই সাধারণ ছুটির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

 

ঈদের ছুটির সময় মানুষের গ্রামের বাড়ি যাওয়া ঠেকাতে এর আগের চারদিন এবং পরের দুই দিনসহ মোট সাতদিন জরুরি সেবা ছাড়া কোনো যানবাহন চলবে না।

 

ছুটির ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ২১ মে শবে কদরের ছুটি রয়েছে, ২২ মে এবং ২৩ মে সাপ্তাহিক ছুটি এবং ২৪ থেকে ২৬ মে পর্যন্ত ঈদের ছুটি রয়েছে। 

 

এদিকে বৃহস্পতিবারই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ছুটি সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। এতে ১৫টি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়।


বৃহস্পতিবার (১৪ মে) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সমন্বয় অধিশাখার উপসচিব মোহম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত আদেশে এ তথ্য জানা গেছে। আদেশের কপি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, বিভাগীয় কমিশনার ও সব জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠানো হয়েছে।

 

আদেশে বলা হয়েছে - 

 

১.  আগামী ১৭ মে থেকে ২৮ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি থাকাকালীন জনসাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা/ সীমিত থাকবে। ২১ মে (শবে কদরের সরকারি ছুটি), ২২, ২৩, ২৯ ও ৩০ মে সাপ্তাহিক ছুটি এবং ২৪, ২৫ এবং ২৬ মে (ঈদুল ফিতরের সাধারণ/ সরকারি ছুটি) এ ছুটি/ নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

 

২. সাধারণ ছুটি এবং চলাচল নিষেধাজ্ঞাকালে এক জেলা থেকে অন্য জেলা বা এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় জনসাধারণের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। জেলা প্রশাসন আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সহায়তায় এ নিয়ন্ত্রণ সতর্কভাবে বাস্তবায়ন করবে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধকল্পে জনগণকে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে। রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত অতীব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (প্রয়োজনীয় কেনাকাটা, ওষুধ কেনা, চিকিৎসা নেওয়া, মৃতদেহ দাফন বা সৎকার করা, ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে আসা যাবে না।

 

৩. সাধারণ ছুটি এবং চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকাকালে জনসাধারণ ও সব কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশমালা  কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।

 

৪. রমজান এবং ঈদকে সামনে রেখে দোকান পাটে ক্রয়বিক্রয়কালে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। শপিংমলের প্রবেশদ্বারে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শপিংমলে আসা যানবাহন অবশ্যই জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এসব শুপিংমল দোকান পাট বিকাল ৪টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে।

 

৫. সাধারণ ছুটির সময় জরুরি পরিসেবা, যেমন বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস বন্দসমূহের (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা, এবং সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীগণ এ ছুটির বাইরে থাকবেন।

 

৬. সড়ক ও নৌপথে সব প্রকার পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত যানবাহন (ট্রাক, লরি, কার্গো, ভেসেল, ইত্যাদি) চলাচল অব্যাহত থাকবে।

 

৭. কৃষিপণ্য, সার, বীজ, কীটনাশক, খাদ্য, শিল্পপণ্য, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালামাল, কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল, ও জরুরি সেবা এবং এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, কর্মীদের ক্ষেত্রে এ ছুটি প্রযোজ্য হবে না।

 

৮. চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী, ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম বহনকারী যানবাহন ও কর্মী, গণমাধ্যম (ইলেক্টনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া, ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কে নিয়োজিত কর্মীগণ এই সাধারণ ছুটি/ চলাচল নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবেন।

৯. ওষুধশিল্প, উৎপাদন ও রফতানিমুখী শিল্পসহ সব ধরনের কলখারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করে চালু রাখতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রনীত স্বাস্থ্যসেবা পরিপালনের নির্দেশনা নিশ্চিত করতে হবে।

 

১০. পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তীতে শিল্প কারখানা, কৃষি এবং উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত করা হবে।

 

১১. সাধারণ ছুটি বা নিষেধাজ্ঞা কালীন কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে না।

 

১২. রমজান ঈদ এবং ব্যবসা বাণিজ্যের সুবিধা বিবেচনায় ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।

 

১৩. সব মন্ত্রণালয়/বিভাগ তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অফিসসমূহ, প্রয়োজন অনুসারে খোলা রাখবে। সেই সঙ্গে তারা তাদের অধিক্ষেত্রের কার্যাবলী পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। মন্ত্রণালয়/ বিভাগ এবং আওতাধীন অফিসসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জারিকৃত ১৩ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে মানতে হবে।

 

১৪. সাধারণ ছুটি/নিষেধাজ্ঞাকালে কেউ কর্মস্থল কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবে না। এই সময়ে সড়কপথে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান, ও রেল চলাচল এবং অভন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে। মহাসড়কে মালবাহী/জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন ব্যতীত অন্যান্য যানবাহন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

 

১৫. আসন্ন ঈদের নামাজের ক্ষেত্রেও বর্তমান বিদ্যমান বিধিবিধান প্রযোজ্য হবে। উন্মুক্ত স্থানে বড় জমায়েত পরিহার করতে হবে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশণা জারি করবে। 

 

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারি-বেসরকারি অফিস প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে তা কয়েক দফায় ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

 

৩০ মে পর্যন্ত গণপরিবহন বন্ধ

 

গণপরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আগামী ৩০ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিস্তাররোধে সাধারণ ছুটি আগামী ৩০ মে পর্যন্ত বর্ধিত করার পর গণপরিবহনের ব্যাপারে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।

 

বৃহস্পতিবার (১৪ মে) সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপ-প্রধান তথ্য অফিসার মো. আবু নাছের স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।



এতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধ এবং পরিস্থিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার সাধারণ ছুটি আগামী ৩০ মে পর্যন্ত বর্ধিত করায় দেশব্যাপী চলমান গণপরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত আগামী ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

 

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জরুরি পরিষেবা যেমন-বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের কার্যক্রম (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর), পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাকসেবা ও সংশ্লিষ্ট কাজ, খাদ্যদ্রব্য, কাঁচাবাজার, সড়ক ও নৌপথে সকলপ্রকার পণ্য, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালামাল, ঔষধ, ঔষধশিল্প, চিকিৎসা সেবা ও চিকিৎসা বিষয়ক সামগ্রী পরিবহন, শিশুখাদ্য, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া, ত্রাণ, কৃষিপণ্য, শিল্পপণ্য, সার, বীজ, কীটনাশক, পশুখাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উৎপাদিত পণ্য, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য এবং জীবনধারণের মৌলিক পণ্য উৎপাদন ও পরিবহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।

 

পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী পরিবহন করা যাবে না বলেও জানিয়ে দেয়া হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

 

এর আগে সরকার চলমান সাধারণ ছুটি ৩০ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে আদেশ জারি করে। এর মধ্যে শবে কদর ও ঈদুল ফিতরের ছুটিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

বাংলাদেশ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর