ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৪১১

পিরিয়ড নিয়ে যত মিথ, যেসব ভাঙা জরুরি

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:৩৬ ১৭ জানুয়ারি ২০২৩  

পিরিয়ড নিয়ে মিথের শেষ নেই। কিছু তো রীতিমতো পিলে চমকে দেওয়া। কিছু আবার খুবই অদ্ভুত! একবার ফেসবুকে পিরিয়ড সংক্রান্ত মিথ, প্রথম পিরিয়ডের শ্বাসরুদ্ধকর অভিজ্ঞতা ইত্যাদি জানতে চেয়েছিলাম। কে কেমন করে সামাল দিয়েছেন সেই মহারণ? পরিবার, সমাজের অবস্থানই বা কেমন ছিল? অনেকেই অকপটে বলেছেন জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেই দিনের কথা। কারো আবার আছে পেইনফুল অভিজ্ঞতা। অনেক অনেক ইনবক্সের মধ্যে দুএকটা তুলে ধরছি-

 

মাহমুদা নাসরীন নামে (ছদ্মনাম) একজন লিখেছেন, জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় পার করে এসেছি। আমাদের সময় পিরিয়ড নিয়ে খুব একটা কথা বলা হতো না। পরিবারের লোকজন বরং ব্যাপারটাকে লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করতো। ওই বিশেষ দিনগুলোতে আলাদা ঘরে থাকতে হতো। মাছ মাংস খেতে দেওয়া হতো না। শুধু সব্জি সেদ্ধ, কলা ভর্তা দিয়ে ভাত খেতে হতো। তাতে নাকি গন্ধ কম হবে। পুরুষ মানুষের সাথে কথা তো দূর থাক বাইরে বের হতে দিতো না। সাতদিন পর হলুদ, দুধ দিয়ে গোছল দিতো। পরনের কাপড় চোপড় পুড়িয়ে ফেলা হতো।

 

মোবাশ্বিরা হক নামে ( ছদ্মনাম) আরেকজন লিখেছেন, আমাদের বলা হতো, পিরিয়ডের সময় সন্ধ্যা বেলায় ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। তাহলে খারাপ জ্বিনে ধরবে এবং রক্তের সাথে মিশে যাবে। এই জ্বিন পরবর্তিতে পিরিয়ডের সমস্যা করবে এবং সেটা কখনোই ভালো হবে না।

 

ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখলাম, পিরিয়ডের সময় সমুদ্রে নামলে শার্ক ধরে নিয়ে যাবে! পিরিয়ডের গন্ধে নাকি শার্ক চলে আসবে! যদিও এ কথার কোনো ভিত্তি নেই।

 

দেশে দেশে পিরিয়ড নিয়ে এমন নানা মিথ ছড়িয়ে আছে। এদের মধ্যে কোনোটা ফানি, কোনোটা হানি, কোনোটা পিলে চমকানি!

 

ইউনিসেফ ফর এভরি চাইল্ড সারা বিশ্বের শিশুদের নিয়ে কাজ করে। তারা মনে করে পিরিয়ড রিলেটেড সাতটি এলাার্মিং মিথ বা কুসংস্কার আছে যা ভাঙা খুবই জরুরি। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার বাচ্চাদের জন্য এটা আরো বেশি জরুরি। কেননা এই উপমহাদেশের মানুষগুলো পিরিয়ড নিয়ে নানা কুসংস্কার মেনে চলে।

 

"লেটস ব্রেক দ্যা সাইলেন্স" নামে ইউনিসেফের পিরিয়ড নিয়ে ভয়ংকর মিথ বা কুসংস্কার এবং তার রিয়েল ফ্যাক্টগুলো তুলে ধরছি। আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে।

 

#মিথঃ এক.

পিরিয়ডের ব্লাড অপবিত্র। এই সময় রান্না করা বা পবিত্র জায়গা পরিদর্শন করা যাবে না।

#ফ্যাক্টঃ পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব প্রকৃতির একটা কথা বলার ধরণ বা বার্তা প্রদানের পদ্ধতি। যার অর্থ, 'তুমি বড় হয়েছো মেয়ে।' এতে পবিত্র অপবিত্রতার কিছু নেই।

 

#মিথঃ দুই.

সেনেটারী ন্যপকিন বা পিরিয়ডের অনুষঙ্গ গোপনীয় জায়গায় রাখা উচিত। এসব অনুষঙ্গ পারচেজ করার সময় পেপার দিয়ে ঢেকে /মুড়িয়ে পারচেজ করা উচিত।

#ফ্যাক্টঃ

স্যাম্পু, সাবান, টুথপেষ্ট কেনার মতোই স্বাভাবিক পিরিয়ডের অনুসঙ্গ কেনা। এগুলো সবই পারসোনাল হাইজিন মেইনটেইন করার কাজে ব্যবহৃত হয়।

 

#মিথঃ তিন.

পিরিয়ডের সময় গাছের কাছে যাওয়া যাবে না। গাছ ধরা যাবে না। এতে গাছ মারা যাবে।

#ফ্যাক্টঃ

গাছ পার্থক্য করে না। মানুষের মতো গাছও বাঁচে যত্নে, ভালোবাসায়। কে সামনে দিয়ে গেলো, কে ধরলো এতে গাছের কিছু আসে যায় না।

 

#মিথঃ চার.

পিরিয়ডের সময় দই, হলুদ, টক জাতীয় খাবার খাওয়া ঠিক নয়। এতে ব্লাড ফ্লো পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।

#ফ্যাক্টঃ

খাবার তোমার পিরিয়ডের ব্যপারে সিদ্ধান্ত নেয় না। পিরিয়ডের ফ্লো নিয়ন্ত্রণ করে না।

 

#মিথঃ পাঁচ.

পিরিয়ডের সময় অন্য কোনো নারীর সাথে বেড শেয়ার করা উচিত নয়। এতে তার ও পিরিয়ড হয়ে যেতে পারে।

#ফ্যাক্টঃ

পিরিয়ড ছোঁয়াচে নয়। কাজেই রুম কিংবা বিছানা শেয়ার করলে সমস্যা নেই। যদি রুমের/ ঘরের অন্য কারো পিরিয়ড একই সময়ে হয়েই যায় তবে তা ইন্সিডেন্টাল।

 

#মিথঃ ছয়.

পিরিয়ের সময় কাজ, এক্সারসাইজ পিরিয়ডের ফ্লো কে বাধাগ্রস্ত করে।

#ফ্যাক্টঃ

কাজ, এক্টিভিটি, এক্সারসাইজ পিরিয়ডের ফ্লো কে বাধাগ্রস্ত করে না। বরং খেলাধুলা পিরিয়ডের ক্রাম্প মানে পেইনকে কমাতে সাহায্য করে।

 

#মিথঃ সাত.

মেয়েদের পিরিয়ডের কথা জনসমক্ষে বলা, আলোচনা করা উচিত নয়। যদি কেউ বলে তবে তার জনসম্মুখে লজ্জিত হওয়া উচিত।

#ফ্যাক্টঃ

তুমি কি চুল, হেয়ার কালার, নেইলপালিশের শেড নিয়ে কথা বলতে দুইবার ভাবো? পিরিয়ড নিয়ে কথা বলাও তেমন একটি ব্যপার। ভাবাভাবির কিচ্ছু নেই।

 

পুবের আকাশ চিড়ে উঁকি দেয় সূর্য।

সোনালি আলোয় ঝলমল করে পৃথিবীর পথ ঘাট।

বনে বনে ফুল ফল পাতাদের রংবাহারী সাজ।

 

বাতাসের ভেলায় মেঘের বার্তা, তারাদের বিয়ে আজ।

নক্ষত্রের বিয়ের সৌজন্যে

নাচবে ঋতুমতী কন্যে।

 

ফুল পাখি লতাপাতা আকাশ বাতাস চন্দ্র সূর্য নক্ষত্রের মতো ঋতুমতী নারীর ক্ষরণ ও স্বাভাবিক একটা বিষয়। মিথ বা কুসংস্কার নয়। সহজ সত্য সুন্দরের ঝর্ণাধারায় ধৌত হোক মানব হৃদয়।

 

লেখক: ডা. ছাবিকুন নাহার

এমবিবিএস ( ঢাকা), বিসিএস ( স্বাস্থ্য)

এফসিপিএস ( অবস & গাইনী)

স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ইনফার্টিলিটি

স্ত্রী, প্রসূতি ও গাইনীরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন

ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।